নারায়ণের মৎস্যাবতাররূপে আবির্ভাবের পৌরাণিক কাহিনি বিবৃত করাে
উত্তর : কোনাে একসময় বৈবস্বত মনু নামে এক মহর্ষি ( মতান্তরে সত্যব্রত নামে এক রাজা ) ছিলেন । তিনি অযুত বছর অতি কঠোর তপস্যা করেছিলেন । একদিন তিনি আদ্র বস্ত্র বস্ত্রপরিধান করে জটাধারী হয়ে চারিণী নদীতীরে তপস্যা করছিলেন । সেই সময় একটি ছােট্ট মৎস্য তাঁর কাছে এসে জানালেন , “মহারাজ , দেশে মাৎস্যন্যায় দেখা দিয়েছে । বড়াে মাছগুলি ছােটো মাছগুলিকে গিলে ফেলছে । আমি নিতান্ত ছােট্ট মৎস্য । আপনি আমাকে রক্ষা করুন । আমিও আপনাকে রক্ষা করব ।” মনু জিজ্ঞাসা করলেন , “তুমি কীভাবে আমাকে রক্ষা করবে ? ” মৎস্যটি বলল , “মহাশয় , জগতের সংহার -সময় উপস্থিত হয়েছে ।
অচিরে এক মহাপ্লাবন সংঘটিত হবে । সেই প্লাবনে জগৎ লয়প্রাপ্ত হবে । আপনি পূর্বেই রজ্জুসংযুক্ত একটি সুদৃঢ় নৌকা নির্মাণ করিয়ে রাখুন এবং সপ্তর্ষিগণ,বেদসমূহ এবং সৃষ্টির বীজ সংগ্রহ করে রাখুন । প্লাবন উপস্থিত হলে আপনি পূর্বসংগৃহীত বীজাদি - সহ নৌকায় আরােহণ করবেন । তখন একটি শৃঙ্গধারী মৎস্য আপনার কাছে উপস্থিত হবে । মৎস্যের শৃঙ্গে আপনি নৌকাটি বেঁধে দেবেন । সেই মৎস্য আপনাকে নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দেবে ।”মনু সদয়হৃদয় হয়ে মৎস্যটিকে জল থেকে তুলে আপন কমণ্ডলুতে রেখে দিলেন । পরদিন দেখেন মৎস্যটি এমন বড়াে হয়ে গেছে যে, সে কমণ্ডলুতে ঘােরাফেরা করতে পারছে । মাছটি মনুকে অন্য বৃহৎ জলাশয়ে রাখতে বলেন । মাছটিকে এক বৃহৎ জলাশয়ে রাখা হল । পুনরায় মাছটি দ্রুত বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হতে লাগল । তখন মৎস্যের অনুরােধে তাকে গঙ্গায় এবং গঙ্গা থেকে সাগরে রাখা হল ।
[ ] অতঃপর সেই ভয়ংকর দিন উপস্থিত হল । দেখা দিল মহাপ্লাবন । মনু , সপ্তর্ষিগণ,বেদসমূহ এবং সৃষ্টির বীজসমূহ নিয়ে নৌকায় অবস্থান করলেন । উপস্থিত হল সেই শৃঙ্গধারী মৎস্য । মনু যত্নপূর্বক মৎস্যের শূঙ্গে নৌকাটি বেঁধে দিলেন । মৎস্য নৌকা নিয়ে হিমালয়ের সুউচ্চ স্থানে গেল । পুনরায় মৎস্যটি বলল , “ আপনি এখানে নিরাপদে থাকুন । ক্রমে ক্রমে জল যখন কমতে থাকবে , আপনিও ধীরে ধীরে অবতরণ করবেন ।” সেই কারণে হিমালয়ের ওই শৃঙ্গ ‘নৌবন্ধনশৃঙ্গ ’-রূপে পরিচিত । অতঃপর মৎস্যের নির্দেশে মহাত্মা মনু স্থাবর, জঙ্গম ,দেবাসুর , মানুষ প্রভৃতি প্রজাবর্গও লােকসকল সৃষ্টি করলেন ।
কোন মন্তব্য নেই