‘ গালিলিও ’ প্রবন্ধ অবলম্বনে গালিলিওর চরিত্রটি বিশ্লেষণ করো ।
উত্তর : গালিলিও গালিলাই বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী । চারশাে বছর পরেও তিনি সব দেশের সভাসমিতিতে বহুল আলােচিত নাম । বিজ্ঞানী হয়ে ওঠার পিছনে দারিদ্রের বিরুদ্ধে তাঁর কঠোর সংগ্রাম , শ্রম, নিষ্ঠা, সাধনা , একাগ্রতা ও অধ্যবসায় তাঁর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের উল্লেখ্য দিক ।
জীবনের প্রথম দিকে শিক্ষার ব্যাপারে ছিলেন অনেকটাই দিগভ্রান্ত । ১৩ বছর বয়সে যান বেনেডিকটিন সম্প্রদায়ের মঠে । সেখানে দু-বছর সাহিত্য , ন্যায় ও ধর্মশাস্ত্র পড়েন । তাঁর ভালাে লাগা সংগীত ও চিত্রকলা চর্চা করেন । চিত্রকলা চর্চা চালিয়ে গেলে হয়তাে চিত্রকর হতে পারতেন । সতেরাে বছর বয়সে পিসা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাক্তারিতে ভরতি হন । ওই সঙ্গে দর্শন পড়তে হয় । কিন্তু গালিলিওর ঝোঁক ছিল হাতে কলমে জ্ঞান -বিজ্ঞানের চর্চা । ঘটনাক্রমে তিনি গণিত ও পদার্থ বিজ্ঞানের প্রতি অনুরক্ত হয়ে অদ্ভুত নিষ্ঠা ও অধ্যবসায় গুণে গণিত ও পদার্থবিদ্যায় পারদর্শী হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হন । শ্রম , নিষ্ঠা,অধ্যবসায় ও হাতে -কলমে যন্ত্রপাতি নির্মাণের প্রতি আগ্রহ ছিল তাঁর চরিত্রের বিশেষ বৈশিষ্ট্য ।
দূরবিনের খবরটাই কেবল তাঁর কাছে পৌঁছেছিল । ওই যন্ত্রটিকে কাজের উপযােগী করে নির্মাণ ও তাকে উন্নতমানের করে গড়ে তােলার ক্ষেত্রে কৃতিত্ব গালিলিওর । ওই যন্ত্রই তাঁকে বহুবিধ আবিষ্কার ও কোপারনিকাসের মতবাদ যে অভ্রান্ত, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার মনােবল জুগিয়েছিল ।
জীবনের কঠোর মূল্য দিয়ে, অন্যায়- অবিচারের বলি হয়েও তিনি তাঁর আবিষ্কৃত সত্য । থেকে সরে আসেননি । যুক্তিতর্কের প্রতি তার স্বভাবজ প্রবণতা । তাঁর আমৃত্যু অশেষ দুঃখকষ্টের কারণ হয়েছে , কিন্তু তিনি সত্যভ্রষ্ট হননি । তিনি সনাতনী ভ্রান্ত মতবাদের বিরুদ্ধে বিজ্ঞানের পরীক্ষিত সত্য প্রচারের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন । কুসংস্কার ও ধর্মান্ধতার যাঁতায় গুঁড়াে হয়েও তিনি বলেছেন , নিজে পরীক্ষা, বিচার ও যাচাই করে নিতে হবে সব সত্যকে — শুধু আপ্তবাক্যকে বিশ্বাস করে জীবনকে গড়ে তুললে ভুল হবে । এমনি সত্যসন্ধানী ও সত্যপথের পথিক ছিলেন তিনি ।
কোন মন্তব্য নেই