‘ দ্বীপান্তরের ঘানিতে লেগেছে / যুগান্তরের ঘুর্নিপাক ।’ - প্রসঙ্গ উল্লেখ করে উদ্ধৃতিটির তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও ।
উত্তর : ভারতে ভারতী নেই । তিনি দ্বীপান্তরের বন্দিনী । পূজারির পুজোর আয়ােজন , শঙ্খরাব , অঞ্জলি দানের প্রয়াস ব্যর্থ, পরিহাসতুল্য । পুরুষসিংহ স্বাধীনতা যােদ্ধারা কারাগারে বন্দি , যেহেতু তাঁদের নির্ভীক সংগ্রামের ভয়ে ব্রিটিশ রাজশক্তি ভীত ও সন্ত্রস্ত । ব্যাঘ্রবিক্রমী দেশপ্রেমিকদের উদ্দেশে হানা হচ্ছে অগ্নি-শেল । বাকদেবীর বীণা গুলিবিদ্ধ । বাণীর কমল জেল খাটছে ।
এভাবে যখন নির্মম অত্যাচার ও পীড়ন - তাড়নের স্টিম রােলার চলেছে , তখন বীণাপাণির বীণার তারে ধ্বনিত হয়েছে বিধাতার দৈববাণীর মতাে এক আশার বার্তা । তা হল মায়ের পদ্মাসনে যুগান্তরের ধর্মরাজ রেখেছেন তাঁর চরণ - পদ্ম । ‘পদ্মে রেখেছে চরণ - পদ্ম/যুগান্তরের ধর্মরাজ ।’
কবি কাজী নজরুল ইসলাম ‘দ্বীপান্তরের বন্দিনী ’ কবিতাটি ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে রচনা করেন । আন্দামানের সেলুলার জেলে বন্দিদের মুক্তির জন্য ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দের আগে থেকে আন্দোলন চলছিল । সেলুলার জেলে কয়েদিদের ওপর নিষ্ঠুর অত্যাচারের নানা ঘটনা সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছিল । কবি দ্বীপান্তরের বন্দিনী বাকভারতীর রূপকে বন্দি স্বাধীনতা যোদ্ধাদের অত্যাচারিত জীবনের ছবি তুলে ধরেছেন । বিদেশি সরকারের খুনখারাপি , শােষণ -শাসন , নিপীড়ন , অন্যায় - অবিচারের চিত্রাঙ্কনের মধ্যে হতাশা নিরাশা থাকলেও কবি ছিলেন প্রকৃতপক্ষে আশাবাদী । নতুন যুগের স্বপ্ন ছিল তাঁর দু - চোখে । অনেক রচনাতেই কবি নতুন যুগ ও যুগচেতনার কথা শুনিয়েছেন । এই কবিতার শেষেও শােনালেন নতুন যুগস্রষ্টা ধর্মরাজের উপস্থিতির কথা । আন্দামানের সেলুলার জেলের । যে - ঘানি কয়েদিদের টানতে হচ্ছে , তাতে লেগেছে যুগান্তরের ঘূর্ণিপাক । তাতে আশা করা যাচ্ছে দ্বীপান্তরের অবসান ঘটিয়ে বন্দিদশা ও নিষ্ঠুর শ্রম থেকে মুক্ত হবে বন্দিরা ।
কোন মন্তব্য নেই