‘ধ্বংস হ’ল কি রক্ষ -পুর ?’ – এর রূপকার্থ বিশ্লেষণ করাে । ‘রক্ত সোঁদাল খুব -খারাব ?’ - এর অর্থ বুঝিয়ে দাও । ‘কামান গােলার সিসা স্তূপে’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন ?
উত্তর : উপমান ও উপমেয়ের অভেদ কল্পনাই হল রূপক । উপমান হল যার সঙ্গে তুলনা করা হয় , আর উপমেয় হল যা তুলনার বিষয় । কাজেই রূপকে দুটি অর্থ থাকে । এক, উপমানকে ঘিরে বাইরের অর্থ । দুই, উপমেয়কে কেন্দ্র করে ভিতরের অর্থ । আলােচ্য বিষয়ে উপমান অংশে ‘রক্ষপুর’ বা রাক্ষসপুরী । রাক্ষসরাজ রাবণের রাজালয়সহ রাক্ষস নগরী । রাক্ষসরাজ্য । যার অশােককাননে রামচন্দ্রের স্ত্রী সীতাদেবীকে রাবণ হরণ করে নিয়ে বন্দি করে রেখেছিলেন । যার ওপর চেড়ীদের নির্মম পীড়ন - তাড়ন । সীতাকে রাক্ষসপুরী থেকে উদ্ধার করার জন্য রামচন্দ্র ও লক্ষ্মণ বানরসেনার সাহায্যে যুদ্ধ করেছিলেন ।
যুদ্ধে রাক্ষসপুরী ধ্বংস করে সীতা উদ্ধার করা হয়েছিল । আলােচ্য অংশে কবির প্রশ্ন হল রক্ষ পুর কি ধ্বংস হয়েছে ? সুতরাং উপমান বা বাইরের অর্থের মধ্যে অন্তর্হিত অর্থ যা উপমেয় , তা হল রক্ষ পুর তুল্য আন্দামানের সেলুলার জেলে বন্দি মা সরস্বতী তথা তাঁর স্বাধীনতাকামী বীর সন্তানেরা যে বন্দি, সেই বন্দিশালা কি ধ্বংস হয়েছে ?
দেশমাতার মুক্তির জন্য বন্দি স্বাধীনতা যােদ্ধাদের শায়েস্তা করার জন্য বিদেশি ইংরেজ সরকার যথেচ্ছ গুলি - গােলা চালিয়ে খুন -খারাবের দ্বারা রক্তের স্রোত বইয়ে দিয়েছে । রক্তের সোঁদা গন্ধ বাতাসকে আবিল করেছে । এই অমানুষিক নৃশংস অত্যাচারের দৃষ্টান্ত জঘন্য পৈশাচিক জিঘাংসার পরিচায়ক ।
বিক্ষোভ -আন্দোলনকে বিনাশ করার জন্য তখনকার ইংরেজ শাসক আগ্নেয়াস্ত্রের যথেচ্ছ ব্যবহার করতে থাকে । সেগুলি কামান -বন্দুক ইত্যাদি । সিসা , বারুদ প্রভৃতি দিয়ে কামান -বন্দুকের গুলি -গােলা তৈরি হত । ব্যবহৃত কামান বন্দুক , গুলি- গােলার পরিমাণ এত ছিল যে, তা যেন স্থুপাকার । কবি এখানে ওইসব স্থূপীকৃত আগ্নেয়াস্ত্রের পরিমাণের কথা বােঝাতে চেয়েছেন ।
কোন মন্তব্য নেই