‘ দ্বীপান্তরের বন্দিনী ’ কবিতায় কবির স্বদেশপ্রেম কীভাবে প্রকাশিত হয়েছে তা আলােচনা করাে ।
উত্তর : ‘দ্বীপান্তরের বন্দিনী’ কবিতায় ‘দ্বীপান্তরের বন্দিনী’ হলেন ভারত - ভারতী বা ভারতমাতারূপী বাকদেবী সরস্বতী । তিনি আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে বন্দি স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রতীক ।
বন্দিনী ভারত - ভারতীর মুক্তির জন্য কবি নজরুলের ব্যথিত হৃদয়ের ব্যাকুলতার অবধি নেই । কবিতার প্রতি ছত্রে তাঁর দরদি চিত্তের আকুলতা প্রকাশিত । ভারতমাতা বাকভারতী দ্বীপান্তরে দেড়শাে বছর বন্দিনী । তিনি মুক্ত হয়ে না আসায় তাঁর শূন্যবেদিতে ক্রন্দনধ্বনি উঠছে । রুপাের কাঠির কঠিন স্পর্শে মায়ের রুপাের কমল বিবর্ণ । অস্ত্রধারীর অস্ত্রের আঘাতে তাঁর পদ্ম শতচ্ছিন্ন । এই অন্যায় - অত্যাচার আর অবিচারের ঘটনায় কবি -হৃদয় বেদনাহত । তিনি মায়ের মুক্তির জন্য সতত ব্যাকুল । তাঁর ব্যাকুলতা সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে ,যখন শুনছেন দ্বীপান্তরে বাকভারতী ঘানি টানছেন । ঘানি থেকে জীবন - চুয়ানাে তেলে হােমানল জ্বলছে । সেখানে অত্যাচারিত হয়েও অত্যাচারের কথা বলার স্বাধীনতা নেই । সত্যভাষীকে অন্যায় - অত্যাচারের মার খেতে হচ্ছে । সত্যভাষণের স্বাধীনতাকে বিদ্রোহী আখ্যা দেওয়া হচ্ছে । অত্যাচারী শাসক রাজ্যপাট হারানাের ভয়ে স্বাধীনতাকামী বীরসিংহকে খাঁচাবন্দি করে রেখেছে । ব্যাঘ্রবিক্রম স্বাধীনতা যােদ্ধাকে লক্ষ্য করে অগ্নি শেল হানা হয়েছে । বীণা হয়েছে গুলিবিদ্ধ । বাণীর কমল জেল খাটছে । ব্যাকুল চিত্ত কবিমনের একটু আশা যে, মায়ের মুক্তির পূর্বাভাস সূচিত হয়েছে । কারণ যুগান্তরের ধর্মরাজ বাণীর পদ্মে চরণ রেখেছেন । দ্বীপান্তরের ঘানিতে যুগান্তরের ঘূর্ণিপাক লেগেছে । ‘দ্বীপান্তরের ঘানিতে লেগেছে /যুগান্তরের ঘূর্ণিপাক ।’
কোন মন্তব্য নেই