‘ জীবন - চুয়ানাে সেই ঘানি হ’তে / আরতির তেল এনেছ কি ? ’ – রুপকার্থটি বুঝিয়ে দাও ।
উত্তর : কলুরা কাঠের ঘানিতে তিল ,সরষে প্রভৃতি তৈলবীজ মাড়াই করে তেল নিষ্কাশন করত । ঘানির কাঠের দণ্ড ঘােরানাে হত গােরু দিয়ে । আন্দামানের সশ্রম দণ্ডপ্রাপ্ত কয়েদিদের দিয়ে ঘানির কাষ্ঠদণ্ড ঘােরানাে হত গােরুর পরিবর্তে । এমনি পশুতুল্য অমানবিক পরিশ্রম করানাে হত দ্বীপান্তরিত কয়েদিদের । এখানে তৈলবীজ মাড়ানাে সেই ‘ঘানি’ র কথা বলা হয়েছে ।
ঘানি টানা কঠোর শ্রমের ফলে ঘানিতে মাড়া তেলই কেবল নিষ্কাশিত হত না , কয়েদির জীবন নিংড়ানাে ঘাম ও রক্তের ধারা ঝরে পড়ত । ওই দুর্বিষহ শ্রম ও পীড়ন ছিল বড়ােই মর্মন্তুদ । এভাবে কয়েদির সমস্ত শক্তি নিংড়ানাে হয়ে তা যেন মাড়াই করা আখের ছিবড়েতে পরিণত হত । এই কারণে কবি , বলেছেন ‘ জীবন - চুয়ানাে’ ।
মা সরস্বতীর পুণ্য বেদিতে পুরােহিত পুজোর আয়ােজন করেছেন । মা স্বয়ং দ্বীপান্তরে বন্দিনী । তা সত্ত্বেও পুজোর আয়ােজন । আরতির পঞপ্রদীপ প্রস্তুত । কিন্তু প্রদীপের সলতে জ্বালানাের জন্য তেল বা ঘি দরকার । তা কি সংগৃহীত হয়েছে ? তা কি এসেছে ? দ্বীপান্তরের কয়েদিদের ঘানি নিঃসৃত জীবন - চুয়ানাে তেল । বস্তুত ‘ আরতির তেল ’ রূপকার্থে এখানে ব্যবহৃত । বাণী অর্চনার যে আয়ােজন হয়েছে বাকদেবীর শূন্য বেদিতে , তা যেমন ব্যর্থ প্রয়াস,তেমনি পুজো আয়ােজনের অঙ্গ হিসেবে মায়ের আরতির ব্যবস্থাও আর - এক নিষ্ফলতার দৃষ্টান্ত । পুরােহিতের এই সব অর্থহীন শৌখিন বিলাসে কবি বেদনাহত । কারণ মায়ের সন্তানেরা ঘানি টানার কঠিন পরিশ্রমে, নিষ্ঠুর পীড়নে , পেষণে জীবনের রস -চর্বি নিষ্কাশিত করে মৃতপ্রায় । মায়ের মুক্তি বা স্বাধীনতার জন্যই তাে তাঁদের এই ত্যাগ- তিতিক্ষা, জীবনােৎসর্গ ।
কোন মন্তব্য নেই