‘ বীরাঙ্গনা ’ শব্দের অর্থ নির্দেশ করে মাইকেল মধুসূদন দত্তের রচিত 'বীরাঙ্গনা’ কাব্যের একাদশ সর্গের ‘ জনা ’ চরিত্রটিকে বীরাঙ্গনা বলা যায় কিনা আলােচনা প্রসঙ্গে যুক্তি স্থাপন করাে ।
উত্তর : ‘ বীরাঙ্গনা ’ শব্দের অর্থ বীরনারী ,বীরপত্নী ।
মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘ বীরাঙ্গনা' কাব্যের কোনাে নায়িকাই অস্ত্রধারণ করে ঝাঁসীর রানি লক্ষ্মীবাঈয়ের মতাে বীরাঙ্গনার পরিচয় দেননি । সেই অর্থে কেউ বীরনারী নন । কেউ কেউ বা বীরপত্নী , বীরপ্রেমিকা । কিন্তু মধুসূদনের এই পত্ৰকাব্যে কোনাে নায়িকা সেভাবে কোনাে বীরত্বের পরিচয় রাখেননি ।
একাদশ সর্গের নায়িকা জনা মাহেশ্বরী রাজমহিষী । তিনি বীরস্বামীর জায়া বলে এক মুহূর্তের জন্য মনে এমন ভাবনা স্থান দেননি । বরং পুত্রহন্তার বিরুদ্ধে স্বামীকে বীরযােদ্ধার ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করার প্রয়াস চালিয়ে গেছেন তাঁর পত্রে । বীরপত্নী বলে মনে না করলেও বীরমাতারূপে তিনি গৌরব অনুভব করেছেন । তারই প্রেরণায় তার পুত্র প্রবীর অর্জুনের সঙ্গে যুদ্ধ করে বীরের মৃত্যুবরণ করেছেন । কিন্তু এজন্যও তাঁকে ঠিক বীরাঙ্গনা বলা যায় না ।
‘বীরাঙ্গনা ' কাব্যের নায়িকারা নারী ব্যক্তিত্ব ও মানবিকতাবােধে বীরাঙ্গনাতুল্য দীপ্তিময়ী ও প্রাণােচ্ছল । তাঁরা তেজস্বিনী । এসব গুণে জনা মহিমময়ী । স্বামী নীলধ্বজের দুর্বলতা ও অক্ষত্রিয়ােচিত ব্যবহারে মর্মাহত জনা ক্ষুব্ধ ও রুষ্ট । সেজন্য পত্রের শুরুতে তাঁর অগ্নিস্রাবী ব্যঙ্গ ও শ্লেষের প্রকাশ ।
পুত্রহত্যার প্রতিশােধ না নিয়ে কাপুরুষের মতাে পুত্রঘাতককে সিংহাসনে বসানাের দুর্ব্যবহারে ও অক্ষত্রিয় কাজে জনার লজ্জা ,দুঃখ ও বেদনার শেষ নেই । ‘কি লাজ দুঃখের কথা ,হায় , কব কারে ?’
অর্জুনের বিরুদ্ধে স্বামীকে যুদ্ধে অনুপ্রাণিত করার জন্য স্বামীকে তাঁর বীরদর্প ও মানদৰ্পের কথা স্মরণ করিয়েছেন – ‘ কোথা বীরদর্প তব ? মানদৰ্প কোথা ?’
এভাবে জনার তেজস্বিতা ও নারীব্যক্তিত্বের প্রকাশ ঘটেছে , যা বীরাঙ্গনার সমতুল্য ।
কোন মন্তব্য নেই