বৃহস্পতিবার, ৩১ মার্চ, ২০২২

ভারতের সমাজ , ধর্ম এবং সাহিত্যের ওপর মহাভারতের প্রভাব কী

একাদশ শ্রেণী সংস্কৃত প্রশ্নোত্তর সাজেশন class 11 Sanskrit question answer class xi class eleventh ভারতের সমাজ , ধর্ম এবং সাহিত্যের ওপর মহাভারতের প্রভাব কী bharoter somaj dhormo abong sahitter opor mahabharater provab ki


উত্তর : সমাজ ; ভারতীয় সাহিত্য ও সংস্কৃতির ইতিহাসে মহাভারতের প্রভাব সর্বতােমুখী । অতি শৈশবেই ভারতের জনসাধারণ মাতাপিতা এবং বয়ােজ্যেষ্ঠদের মুখ থেকে শুনে মহাভারতের কাহিনি এবং চরিত্রগুলির সঙ্গে পরিচিত হন । বয়ােবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এই পরিচয় ক্রমেই নিবিড়তা লাভ করে ,
আর সামাজিক জীবনেও মহাভারতের বিশিষ্ট চরিত্রগুলির প্রভাব পড়তে থাকে । ভারতীয় সমাজে এবং জনমানসে মহাভারতের এই প্রভাব যুগ যুগ ধরে অব্যাহত রয়েছে । ভীষ্মের স্বার্থত্যাগ, কর্ণের দানশীলতা , যুধিষ্ঠিরের সত্যনিষ্ঠা, দ্রৌপদীর ওজস্বিতা , বিদুরের নীতিপরায়ণতা এবং আরও বিভিন্ন চরিত্রের বিবিধ গুণাবলি ভারতীয় জনজীবনে চিরকাল নৈতিক প্রেরণা সঞ্চারিত করে আসছে । ভারতীয় জীবনধারার সঙ্গে মহাভারতের চরিত্রগুলি ওতপ্রােতভাবে মিশে রয়েছে । বাঙালির জনজীবনে মহাভারতের কাহিনি এবং চরিত্রগুলি কত দূর প্রভাব বিস্তার করেছে তার প্রমাণ পাওয়া যায় ‘ ভীষ্মের প্রতিজ্ঞা ‘ ’ , বিদুরের খুদ ’ ,‘ ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির’ , ‘ দাতা কর্ণ’, ‘শকুনি মামা ’, দ্রৌপদীর ভাণ্ডার ’ প্রভৃতি অতি প্রচলিত প্রবাদগুলি থেকেই । 

ধর্ম : ভারতের জনগণের কাছে মহাভারত কেবল একটি মহাকাব্যই নয় , এটি তাদের দর্শন এবং ধর্মগ্রন্থের স্থানও অধিকার করেছে । মহাভারত পাঠ ও শ্রবণে পাপ এবং অমঙ্গলের নাশ হয়, এই বিশ্বাস হিন্দুদের মনে দৃঢ়মূল । “যাহা নাই ভারতে , তাহা নাই ভারতে ” —এই প্রসিদ্ধ প্রবাদটির মধ্য দিয়ে মহাভারতের প্রতি ভারতীয় জনগণের অপরিসীম শ্রদ্ধা পরিস্ফুট । মহাভারতে বর্ণিত বিষয়গুলি কবিমানস থেকে স্বতােৎসারিত হওয়ায় তাদের আবেদন সকল শ্রেণির পাঠক চিত্তে সুগভীর । মহাভারতে বর্ণিত প্রত্যেকটি চরিত্র ধ্রুবসত্য বলে ভারতীয়দের বিশ্বাস । এই বিশ্বাস নিয়ে পাঠ ও শ্রবণের ফলে মহাভারতের নীতিধর্ম এবং দর্শন বিষয়ক শিক্ষাসমূহ লাভ করে মানুষ ধন্য হয়েছে । মহাভারতের মহানায়ক ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ভারতের সর্বত্র মন্দিরে মন্দিরে আরাধিত । 1 শ্রীমদ্ভগবদগীতা ভারতীয়দের শ্রেষ্ঠ দর্শনশাস্ত্র । হিন্দুদের শ্রাদ্ধবাসরে অবশ্য পঠিতব্য ধর্মগ্রন্থ । গীতার শিক্ষাও ধর্ম বিষয়ক এবং আত্মতত্ত্ব বিষয়ক শ্রেষ্ঠ শিক্ষা । “যতাে ধর্মস্ততে জয়ঃ ” বা “ সত্যমেব জয়তে ” এই মহান আদর্শটি স্বাধীন ভারতে রাষ্ট্রীয় আদর্শরূপে গৃহীত হয়ে দিকে দিকে ঘােষিত হচ্ছে । 

সাহিত্যঃ এই মহাভারতকে অবলম্বন করে পরবর্তীকালে কত কবি , কত নাট্যকার তাঁদের সাহিত্যকৃতির পরিচয় রেখে গেছেন । মহাকবি ভাস রচিত সাতখানি নাটকের আখ্যানভাগ মহাভারত থেকে গৃহীত । কালিদাসের ‘ বিক্রমাের্কশীয়ম ’ ও ‘ অভিজ্ঞানশকুন্তলম ’ নাটক এবং ভট্টনারায়ণের ‘ বেণীসংহারম ’ নাটক মহাভারতের বিষয় অবলম্বনে রচিত । ভারবি রচিত কিরাতাজুনীয় , মাঘ  রচিত শিশুপালবধ , এবং শ্রীহর্ষ রচিত নৈষধচরিতম ,  প্রভৃতি বিখ্যাত মহাকাব্য বা নাটকগুলির বিষয়বস্তু মহাভারত থেকে গৃহীত । খ্যাত বা অখ্যাত বহু কবি ও  নাট্যকার মহাভারতের কাহিনিকে উপজীব্য করেই সংস্কৃত ভাষায় বহু বিচিত্র সাহিত্য সৃষ্টি করেছেন ।


 মহাভারতে নল -দময়ন্তীর কাহিনিকে অবলম্বন করে রচিত হয়েছে ২৭ টি কাব্য, ২৭ টি নাটক এবং একটি চকাব্য । মহাভারত অবলম্বনে ত্রিবিক্রমভট্ট বিরচিত ‘ নলচম্পূ ’বিশেষ প্রসিদ্ধ । বৌদ্ধ ও জৈন কবি ও সাহিত্যিকগণ নিজ নিজ ধর্মমতের অনুকূলে মহাভারতের কাহিনিকে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে পরিবেশন করেছেন । শিবিজাতক , কুণালজাতক , ঘটজাতক প্রভৃতি পালি ভাষায় মহাভারতের ছায়া লক্ষ করা যায় । মহাভারতের দ্বারা প্রভাবিত জৈন গ্রন্থগুলির মধ্যে হরিবংশপুরাণ , উত্তরপুরাণ , পাণ্ডবচরিত , জৈন মহাভারত , বা পাণ্ডবপুরাণ , উল্লেখযােগ্য ।
 

বাংলা সাহিত্যে ও মহাভারতের প্রভাব অপরিসীম । কাশীরাম দাসের মহাভারত বাঙালির ঘরে ঘরে সমাদৃত । বাংলা সাহিত্যের বহু উল্লেখযােগ্য রচনার ভিত্তি হল মহাভারত । মহাভারতের বহু কাহিনির দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়ে রবীন্দ্রনাথ বহু অমূল্য বিষয় রচনা করেছেন । তাঁর কর্ণকুন্তীসংবাদ , গান্ধারীর আবেদন , কচ ও দেবযানী উপাখ্যান , প্রভৃতি উপাদেয় নাট্যকাব্য মহাভারতাশ্রয়ী । বহির্ভারতে যবদ্বীপ প্রভৃতি দেশেও মহাভারতের প্রভাব পরিলক্ষিত হয় । পৃথিবীর নানা ভাষায় অনুবাদের মাধ্যমে মহাভারতের প্রভাব দিকে দিকে বিস্তার লাভ করেছে ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন