শুক্রবার, ১ এপ্রিল, ২০২২

রামায়ণে ক -টি কাণ্ড আছে ? কাণ্ডগুলি কী কী ? রামায়ণের কাণ্ডভিত্তিক বিষয়বস্তু আলােচনা করাে

একাদশ শ্রেণী সংস্কৃত সাহিত্যের ইতিহাস  প্রশ্নোত্তর সাজেশন class 11 Sanskrit question answer class xi class eleventh রামায়ণে ক -টি কাণ্ড আছে কাণ্ডগুলি কী কী রামায়ণের কাণ্ডভিত্তিক বিষয়বস্তু আলােচনা করাে ramayana koti kando ache kando guli ki ki kando bhittik bishoyabostu alochona koro


উত্তর :  আদি কবি বাল্মীকি রচিত ‘রামায়ণ ’ আদি মহাকাব্য । চব্বিশ হাজার শ্লোকে রচিত এই মহাকাব্যখানি সাতটি কাণ্ডে বিভক্ত । কাণ্ডগুলি যথাক্রমে -( ১ ) আদিকাণ্ড বা বালকাণ্ড ( ২ ) অযােধ্যাকাণ্ড ( ৩ ) অরণ্যকাণ্ড , ( ৪) কিষ্কিন্ধ্যাকাণ্ড ( ৫ ) সুন্দরকাণ্ড ( ৬ ) লঙ্কাকাণ্ড বা যুদ্ধকাণ্ড এবং ( ৭ ) উত্তরকাণ্ড । 

প্রাচীন ভারতের মহৎ এবং ঐতিহ্যপূর্ণ ইতিহাসরূপে রামকথা তথা রামায়ণ সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় ধর্মীয় পুরাবৃত্ত । এই মহাকাব্যখানির কাণ্ডভিত্তিক বিষয়বস্তু হল  

আদিকাণ্ড বা বালকাণ্ড : কোশল দেশের রাজধানী  অযােধ্যার রাজা দশরথ । তাঁর তিন রানি কৌশল্যা , কৈকেয়ী এবং সুমিত্রা । তিনি নিঃসন্তান । বশিষ্ঠের পরামর্শে ঋষ্যশৃঙ্গ মুনির তত্ত্বাবধানে যজ্ঞ করে চার পুত্রলাভ করেন । কৌশল্যার গর্ভে রাম , কৈকেয়ীর গর্ভে ভরত , সুমিত্রার গর্ভে লক্ষ্মণ ও শত্রুঘ্ন । রাক্ষসদের অত্যাচার নিবারণের জন্য বিশ্বামিত্র দশরথের কাছে রাম - লক্ষ্মণের সাহায্য প্রার্থনা করলে রাজা প্রবল অনিচ্ছা সত্ত্বেও পুত্রদ্বয়কে পাঠাতে বাধ্য হলেন । তাড়কা , সুবাহু প্রভৃতি রাক্ষসদের বধ করে রাম - লক্ষ্মণ বিশ্বামিত্রের সঙ্গে মিথিলায় উপস্থিত হলেন । মিথিলারাজ জনকের আয়ােজিত সীতার স্বয়ংবরসভায় রামচন্দ্র হরধনু ভঙ্গ করলেন । বিশ্বামিত্রের প্রস্তাবে দশরথকে মিথিলায় আনিয়ে রাম - লক্ষ্মণের সঙ্গে যথাক্রমে জনককন্যা সীতা ও ঊর্মিলার এবং ভরত ও শত্রুঘ্নের সঙ্গে জনকের ভ্রাতুস্পুত্রী মাণ্ডবী এবং শ্রুতকীর্তির বিবাহ সম্পন্ন হল । অতঃপর পুত্র ও পুত্রবধূদের নিয়ে দশরথ অযােধ্যায় ফেরেন এবং দীর্ঘ বারাে বছর আনন্দে অতিবাহিত হল । 
 অযােধ্যাকাণ্ড : যথাসময়ে দশরথ জ্যেষ্ঠপুত্র রামচন্দ্রকে রাজ্যে অভিষিক্ত করতে চাইলেন । অভিষেক অনুষ্ঠানের অয়ােজন করা হল । কৈকেয়ী স্বামী প্রদত্ত পূর্ব প্রতিশ্রুতি মতাে রামের চোদ্দো বছর বনবাস এবং ভরতের জন্য অযােধ্যার সিংহাসন — এই দুটি বর চাইলেন । পিতৃসত্য পালনের জন্য রাম বনে গেলেন । লক্ষ্মণ এবং সীতা অনুগামী হলেন । দশরথ পুত্রশােকে মারা গেলেন । ভরত - শত্রুঘ্নকে মাতুলালয় থেকে আনা হল । ভরত মাতাকে তীব্র ভৎসনা করে রামচন্দ্রকে ফিরিয়ে আনতে গেলেন । রামচন্দ্র পিতৃসত্য ভঙ্গ করতে রাজি হলেন না । ভরত রামচন্দ্রের পাদুকাদ্বয় এনে সিংহাসনে বসিয়ে ও তাঁর প্রতিনিধি হয়ে রাজ্য পরিচালনা করতে লাগলেন ।
 

অরণ্যকাণ্ড : সীতা এবং লক্ষ্মণকে সঙ্গে নিয়ে রাম অত্রি মুনির আশ্রম থেকে দণ্ডকারণ্যে প্রবেশ করলেন । সেখানে বিরাধ রাক্ষসকে বধ করে সুতীক্ষ্ণ,অগস্ত্য প্রভৃতি মুনিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে পঞ্চবটী বনে উপস্থিত হলেন । সেখানে কুটির নির্মাণ করে বাস করতে লাগলেন । রাবণের বিধবা ভগ্নী শূর্পণখা বিবাহের প্রস্তাব নিয়ে রাম - লক্ষ্মণের কাছে উপস্থিত হলে লক্ষ্মণ তার নাসা ও কর্ণ ছেদন করেন । শূর্পণখার ভাই খর সসৈন্যে রামকে আক্রমণ করে নিহত হয় । শূর্পণখার মুখে সমস্ত ঘটনা শুনে রাবণ সীতাহরণের সিদ্ধান্ত নেন । মারীচের ছলনায় রাম -লক্ষ্মণ প্রতারিত হলে রাবণ ছদ্মবেশে সীতাকে হরণ করলেন । সীতার অনুসন্ধান করতে করতে রাম -লক্ষ্মণ জটায়ুর মুখে সীতাহরণের সংবাদ শুনে বিষাদগ্রস্ত হলেন । 

কিষ্কিন্ধ্যাকাণ্ড : রাম -লক্ষ্মণ ঋষ্যমুখ পর্বতে গমন করলেন এবং পম্পা সরােবরের তীরে উপস্থিত হলেন । বানররাজ বালীর ভ্রাতা সুগ্রীবের সঙ্গে তাঁরা মৈত্রী স্থাপন করলেন । পরস্পর শর্তানুসারে বন্ধুত্বস্থাপিত হল । রাম যুদ্ধে বালীকে বধ করে সুগ্রীবকে কিষ্কিন্ধ্যার সিংহাসনে প্রতিষ্ঠিত করলেন । অতঃপর সুগ্রীবও আপন সেনাদলকে সঙ্ঘবদ্ধ করে সীতার সন্ধানে চর পাঠালেন । বানর সেনাপতি হনুমান সীতার অন্বেষণে দক্ষিণ দেশে যাত্রা করলেন । 

সুন্দরকাণ্ড : হনুমান সমুদ্র অতিক্রম করে লঙ্কায় প্রবেশ করলেন । রাবণের অন্তঃপুরে সীতার সন্ধান না- পেয়ে তিনি । । অশােক বনে প্রবেশ করলেন । সেখানে সীতা রাক্ষসীদের হাতে বন্দিনী । সীতার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সত্বর তাকে উদ্ধারের পরিকল্পনা জানানাে হল । হনুমান লঙ্কা দগ্ধ করে সীতার  অভিজ্ঞান সঙ্গে নিয়ে কিষ্কিন্ধ্যায় রামের কাছে প্রত্যাবর্তন করলেন । 

লঙ্কাকাণ্ড বা যুদ্ধকাণ্ড : রাম লঙ্কা অভিযানের পরিকল্পনা করে সমুদ্রের ওপর সেতু বন্ধনের কর্ম সম্পূর্ণ করলেন । উভয় পক্ষে যুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু হল । বিভীষণ অগ্রজ রাবণকে এই যুদ্ধের ভয়ংকর পরিণতির কথা জানালে রাবণের দ্বারা অপমাণিত হয়ে রামের পক্ষ অবলম্বন করলেন । শুরু হল রাম -রাবণের যুদ্ধ । রাবণ সবংশে নিহত হলেন । রামচন্দ্র বিভীষণকে লঙ্কার সিংহাসনে অভিষিক্ত করলেন । অতঃপর সীতার চরিত্র সম্বন্ধে লােকনিন্দার অপবাদ মােচনের জন্য সীতার অগ্নিপরীক্ষা করা হল । রামচন্দ্র সীতা এবং লক্ষ্মণের সঙ্গে অযােধ্যায় প্রত্যাবর্তন করে রাজ্যভার গ্রহণ করলেন ।


উত্তরকাণ্ড ; অযােধ্যার প্রজারা সীতার চরিত্র সম্বন্ধে সন্দেহ প্রকাশ করলে রামচন্দ্র সীতাকে বাল্মীকির তপােবনে নির্বাসিতা করেন । সেখানে সীতা লব - কুশ নামক যমজ পুত্র প্রসব করেন । কিছুকাল পর রামচন্দ্র অশ্বমেধ যজ্ঞ করলে লব - কুশ যজ্ঞের অশ্ব ধরলেন । যুদ্ধে রামচন্দ্রের পরাজয় হল । বাল্মীকি মুনি লব - কুশকে নিয়ে রামের যজ্ঞসভায় উপস্থিত হয়ে সুধীমণ্ডলীকে রামায়ণ গান শােনালেন । পুত্রদের প্রকৃত পরিচয় পেয়ে রাম দূতের দ্বারা সীতাকে রাজসভায় আনলেন । সীতাকে পুনরায় অগ্নিপরীক্ষা দিতে অনুরােধ করা হল । সীতা ক্ষোভে অপমানে পাতালে প্রবেশ করলেন । যুধাজিতের বার্তাপেয়ে রাম ভরত ও ভরতের দুই পুত্রের সৈনাপত্যে সিন্ধুতীরবর্তী গান্ধর্বরাজ্য জয় করেন এবং স্বয়ং কারাপথ জয় করে লক্ষ্মণের দুই পুত্রকে সেই দেশের রাজা করেন । অতঃপর মহাকাল তপস্বীর বেশে এসে রামকে ইহলীলা ত্যাগ করে স্বর্গে ফিরে যাওয়ার কথা স্মরণ করিয়ে দিলেন । লক্ষ্মণ সরযূ নদীর জলে দেহত্যাগ করলেন । রাম কুশ ও লবকে যথাক্রমে দক্ষিণ ও উত্তর কোশল রাজ্যে অভিষিক্ত করে মহাসমারােহে সরযূ নদীর তীরে গেলেন এবং নদীতে স্নান করে বিষ্ণুরূপে স্বর্গে গমন করলেন । 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন