ভারত - ভারতীর পুজো ও বন্দনার প্রতীকাৰ্থে কবি কাজী নজরুল ইসলামের বক্তব্য তােমার ভাষায় বিশ্লেষণ করাে ।
উত্তর : দ্বীপান্তর আন্দামানে বন্দি স্বাধীনতা যােদ্ধাদের প্রতীক হিসেবে কবি কাজী নজরুল ইসলাম গ্রহণ করেছেন দ্বীপান্তরে বন্দিনী মাতা ভারত -ভারতীকে । পরাধীন ভারতজননীর বন্দিদশা প্রায় দেড়শাে বছরের । পুণ্য বেদিতে মা নেই । বেদি শূন্য। সেখানে উখিত ক্রন্দনধ্বনি জানান দিচ্ছে, মায়ের দ্বীপান্তরের মেয়াদ দেড়শাে বছর অতিক্রান্ত । বন্দিনী মা শাসকশক্তির শাসনে নির্যাতনে জর্জরিত । শস্ত্ৰ-পাণির অস্ত্রের আঘাতে তাঁর পদ্মাসনের শতদল শতচ্ছিন্ন । তাঁর বীণার তার কেটে ফেলা হয়েছে । অথচ বন্দিনী নির্যাতিতা মায়ের আরাধনার ব্যর্থ চেষ্টা চলেছে । কবির তাই প্রশ্ন :
‘ শান্তি-শুচিতে শুভ্রহল কি
রক্ত সোঁদাল খুন -খারাব ?
তবে এ কীসের আর্ত আরতি ,
কীসের তরে এ শঙ্খরাব ? ...........’
দ্বীপান্তরের বন্দিশালার ঘানিতে মায়ের রক্ষী বীর সন্তানদের জীবন - চুয়ানাে তেল নিংড়ে নেওয়া হচ্ছে । সেই তেলে কি মায়ের আরতির প্রদীপ জ্বলবে ? কবি হতাশা প্রকাশ করে বলেছেন হায়
‘ শৌখিন পূজারি , বৃথাই
দেবীর শঙ্খে দিতেছে ফু,
পুণ্যবেদির শূন্য ভেদিয়া
ক্রন্দন উঠিতেছে শুধু !’
পূজারি কাকে অঞ্জলি দেবেন ? ভারতী ভারতে নেই । তিনি যে বন্দিনী । সত্য বলার অধিকার , বাকস্বাধীনতা— সবই যে কেড়ে নেওয়া হয়েছে ।মিথ্যা ‘ বিদ্রোহী ’ আখ্যা দিয়ে সিংহবিক্রম স্বাধীনতাকামীদের খাঁচায় বন্দি করা হয়েছে । ব্যাঘ্রের ন্যায় পরাক্রমশালী দেশপ্রেমিকদের উদ্দেশে হানা হয়েছে অগ্নিশেল ।
এবার কবির প্রশ্ন
‘পূজারি সেখানে এসেছ কি তুমি
বাণী - পুজা-উপাচার বহি’ ?
হতাশা নয় , আশায় উজ্জীবিত কবি দেখেছেন –
‘পদ্মে রেখেছে চরণ - পদ্ম
যুগান্তরের ধর্মরাজ ?
তবে তাই হােক ! ঢাক ’ অঞ্জলি ,
বাজাও পাঞ্চজন্য শাঁখ !
দ্বীপান্তরের ঘানিতে লেগেছে ।
যুগান্তরের ঘূর্ণিপাক ।’
কোন মন্তব্য নেই