‘বেহুঁশ যারা তারাই পবিত্র , হুঁশিয়ার যারা তারাই অশুচি , অতএব হুঁশিয়ারদের প্রতি উদাসীন থেকে , ....'— উদ্ধৃতির প্রসঙ্গ আলােচনা করাে । সেই সূত্রে উদ্ধৃতির সঙ্গে যুক্ত কাহিনিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ ।
উত্তর : প্রসঙ্গ : এদেশ জুড়ে ঘুমপাড়ানি গানের রেওয়াজ । ফলে এদেশবাসী যুগ যুগ ধরে নিশ্চেতন ও নিশ্চেষ্ট । সেই সুযােগে বর্গির মতাে বিদেশি লুঠেরা এসেছে এদেশে যুগে যুগে —ইতিহাস তার সাক্ষী । তাদের শােষক পেয়াদার দল তথা ভূত ও অভূতের আদায়কারী প্রকাশ্যে- অপ্রকাশ্যে বা সদরে - খিড়কিতে খাজনা দেওয়ার তাগিদ দিয়ে গৃহস্থ মানুষের জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছে ।
বুলবুলির কাহিনি : যুগে যুগে বহিরাগত আক্রমণকারীর ঢল নেমেছে । চারিদিক থেকে ধেয়ে আসা এসব বুলবুলি রূপকার্থে লুঠেরা বিদেশি । এই সব বুলবুলির ঝাঁক গৃহস্থের বেহুঁশ ঘুমের অচৈতন্য অবস্থার সুযােগ নিয়ে সব ধান লুটেপুটে খেয়ে নিঃস্ব ও নিঃসম্বল করেছে গৃহস্থকে । অসহায় নিঃস্ব গৃহস্থের জবাব হল , সে কী করে খাজনা দেবে । বুলবুলিতে ধান খেয়েছে খাজনা দেব । ‘ বুলবুলিতে ধান খেয়েছে খাজনা দেব কীসে ?’
কাহিনির তাৎপর্য : দুঃখের কথা দেশবাসীরা তাতেও সজাগ নয় , সচেতন নয় । কারও হুঁশও নেই । অথচ খাজনা দিতে হবে । তাহলে কি আব্লু, ইজ্জত , ইমান আর বুকের রক্ত দিয়ে খাজনা মেটাবে ? এ প্রশ্ন উঠলে একটা কথা এসে পড়ে হুঁশ বা চৈতন্য বা চেতনার কথা । দেখা গেছে জগতে হুঁশিয়ার যারা, যারা নিজেদের সম্পদ ও সম্মান রক্ষায় সজাগ ও সচেষ্ট, বুলবুলির দল তাদের কাছে ঘেঁষে না । সেজন্য তত্ত্বজ্ঞানী শিরােমণি — চূড়ামণির দল পুথি ঘেঁটে বলল যে , বেহুঁশ বা অচেতন যারা, তারাই পবিত্র । হুঁশিয়াররা অর্থাৎ , সজাগ সচেতন সচেষ্টরা অশুচি । কাজেই সজাগ -সচেতনদের প্রতি মনােযােগী না হয়ে উদাসীন থাকা দরকার । জেগে ঘুমানােই শ্রেয় ।
কোন মন্তব্য নেই