রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচিত ‘ কর্তার ভূত ’ রূপক কাহিনির রূপকাৰ্থ বিশ্লেষণ করাে ।
উত্তর : রূপকের অংশ : রূপকের দুটি অংশ থাকে । উপমান ও উপমেয় । উপমান হল বাইরের অর্থ । আর উপমেয় হল ভিতরের অর্থ । এটি বলবার জন্যই লেখক কায়দা করে উপমানের মােড়কটি দিয়ে ঢেকে ঢুকে সুন্দর একটি শিল্পশৈলী তৈরি করে পাঠককে রস উপভােগের জন্য পরিবেশন করেন ।
উপমান অংশর অর্থ : কাজেই রূপক রচনার রূপকাথ বিশ্লেষণ করতে হলে উপমান ও উপমেয় অংশের অর্থ বিশ্লেষণ করা একান্ত দরকার হয়ে পড়ে । প্রথমে উপমান অংশের অর্থ অতি সংক্ষেপে দেখে নেওয়া যাক । বুড়াে কর্তা মরে দেশবাসীর ঘাড়ে ভূত হয়ে ভর করে আছে । ভূতগ্রস্ত অবস্থায় দেশবাসী কাজে নিরুদ্যম ,অলস , ঘুমে অচেতন ও নিশ্চেষ্ট, কোনােরকম হুঁশ নেই । শাসিত ও শােষিত হয়েও , অন্ন-বস্ত্র স্বাস্থ্য - শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়েও নির্বিকার নিস্পৃহ । দু-চারজন প্রতিবাদে বিক্ষোতে সােচ্চার হলে ভূত শাসনের জেলখানার ঘানিতে নিষ্পিষ্ট হয় । ঘুমপাড়ানি গান শুনিয়ে দেশবাসীকে ঘুম পাড়িয়ে দেওয়া হয় । বর্গি আর বুলবুলিতে সর্বস্ব গ্রাস করে । ভূতের শাসন চলতেই থাকে । আসলে ভীতিই হল ভূত । ভীতি জয় করলে তবে ভূতের হাত থেকে রেহাই ।
উপমেয় অংশের অর্থ : উপমেয় অংশের অর্থ হল ব্রিটিশ শাসনে এদেশ দীর্ঘদিন পরাধীন । ফলে এদেশবাসী প্রাচীন ঐতিহ্যবিমুখ , প্রগতিবিরােধী , নানা বাধানিষেধ ও সংস্কারের দাস । চিরাচরিত আনুগত্যে অভ্যস্ত । আত্মচেতনাহীন , নিশ্চেষ্ট ও নিষ্কর্মা । বিদেশি শাসকের শাসনে , শােষণে , লুণ্ঠনে নিষ্পিষ্ট হয়েও শাসকশক্তির প্রভুত্বের প্রতি তাদের সীমাহীন আনুগত্য । ভূতভীতির আনুগত্য থেকে মুক্ত হতে না পারলে পরাধীনতার নাগপাশ থেকে মুক্তি লাভের আশা নেই ।
কোন মন্তব্য নেই