‘ এতক্ষণে বােঝে সৌখী ব্যাপারটা ।’ — ব্যাপারটা কী ছিল ? ব্যাপারটা বােঝার পর সৌখীর মানসিক অবস্থা আলােচনা করাে ।
উত্তর : ব্যাপারটা ছিল মাতাদিন পেশকারের বাড়িথেকে সৌখীর মায়ের লােটা চুরি করা ।
ঘুম ভেঙে গিয়ে সৌখী বুঝতে পারে ব্যাপারটা ।মাত্র চোদ্দো আনা পয়সার জন্য তার মা একটা ঘটি চুরি করেছে । সৌখীর দুঃখ হল এই যে তার মা তাকে কেন পয়সার কথা বলল না । জেলে ঠিকেদারের কাজ করে নব্বই টাকা রােজগার করে এনেছে ।
তার কোমরের বাটুয়ায়তা এখনও আছে । তার মা কেন তার কাছে চেয়ে নিলে না । মায়ের বেআক্কেলে কাজের জন্য তার ওপর কিছু ক্ষোভ হলেও ঘরের দৈন্যদশার কথা ভেবে নিজের বােঝা উচিত ছিল বলে সৌখীর মনস্তাপ হল । তার নিজেরই উচিত ছিল উপযাচক হয়ে মায়ের হাতে টাকাটা দেওয়া । তবে এ কথা ঠিকই , টাকা দেওয়ার সময়ই বা পেল কই ? রাতে এসে সেই যে শুয়েছে, এখনও অবধি বিছানা ছেড়ে ওঠেনি । তার বুকের ভিতরটা হাহাকার করে উঠল —মা শেষ পর্যন্ত সামান্য লােটা চুরি করলে ! যে ছিঁচকে কদুচোরদের এতদিন সে ঘেন্না করে এসেছে , জেলে পারতপক্ষে তাদের সঙ্গে কথা বলেনি , যত আলাপ -সালাপ লাইফারদের সঙ্গে, এমনই দুর্ভাগ্য, তার মা সেই ছিঁচকে কদুচোরদের মতাে জঘন্য কাজ করলে ! ছেলের এ স্বভাবের কথা মা জানে , তবু সে কাজই করলে । তার মা কি জানে কদুচোরদের মাত্র দু-তিন মাসের জেল হয় । সৌখী মায়ের এ হেন আচরণে মর্মাহত ।
জানে জেল থেকে সবে ফিরে - আসা ছেলেকে সংসারের অর্থকষ্টের। কথা জানালে কষ্ট পাবে । খই -মুড়িদিয়ে ছেলের রাতের খাবারের । চিন্তায় ব্যবস্থা করলেও ঘুম থেকে ওঠার পর কী খেতে দেবে সে- বাসে বুড়ি উদ্ভ্রান্ত।ছেলে আলুর চচ্চড়ি খেতে কী ভালােই না মায়ের জানা । ছেলের সেই ভালাে লাগাকে সার্থক করতে সৌখীর মা রাতের অন্ধকারে মাতাদিন পেশকারের বাড়ি থেকে ঘটি চুরি করে । ঘটি বিক্রির পয়সায় আলু , চাল , সরষের তেল কিনে এনে উনানে আলুর চচ্চড়িবসায় । হেনকালে মাতাদিন পেশকার পুলিশসহ সৌখীর বাড়ি এসে তার মুখােমুখি দাঁড়ায়।পুলিশের কাছে 1 সৌখীর মা লজ্জায় মাথা নীচু করে নির্বাক থাকে । ইত্যবসরে সৌখী ঘুম থেকে জেগে সব ব্যাপার বুঝতে পেরে চুরির দায় ও দোষ নিজের ওপর তুলে নেয় । অনুতপ্ত মা মেঝেয় পড়ে ডুকরে ডুকরে কাঁদে । ওদিকে উনানে চড়ানাে আলুর তরকারির পােড়া গন্ধ পাড়াময় ছড়িয়ে পড়ে।
সৌখির মায়ের মাতৃসত্তার পরিচয় : এই ঘটনার মাধ্যমে পাঠকের কাছে সৌখীর মায়ের মাতৃসত্তার ছবিটি স্পষ্ট হয়ে ধরা ( পড়েছে । সৌখীর মা সন্তানবৎসল , স্নেহপ্রবণ । ছেলে বড়াে হয়ে তার চুলে পাক ধরলেও ছেলের শরীর নিয়ে মায়ের উদবেগ আছে । যথারীতি । জেল থেকে ফেরা ছেলেকে দেখে তার মনে হয় রােগ রােগা লাগছে । ছেলে তার আলুর চচ্চড়ি খেতে কী ভালােই না বাসে । ছেলেকে আলুর চচ্চড়ি খাওয়ানাের জন্য মায়ের রাতের ঘুম ছুটে যায়। অভাবের সংসারে আলু , চাল , সরষের তেল কেনার জন্য ছিচকে চোরের মতাে ঘটি চুরি করে আলু , চাল , সরষের তেল কিনতে পিছপা হয় না । অথচ ছিচকে চোরের বৃত্তিটা সে কখনােই পছন্দ করে না। ঘটি চুরির ব্যাপারটা পুলিশের হাতে ধরা পড়ে চুরির দায়িত্বও অপরাধ , । মায়ের দুঃখ ও ছেলে নিজের ঘাড়ে তুলে নিলে , স্নেহময়ী অনুতাপের অন্ত থাকে না। নিজের চরির কলক । ছেলের ওপর পড়েছে দেখে বুড়িরশােক আর বাধ মানে না। ঘরের । মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে ডুকরে ডুকরে কাঁদতে । এই যে প্রকাশ তা তুলনারহিত । থাকে । তার মাতৃসও
কোন মন্তব্য নেই