‘এ কথ্য ইওরােপীয়েরা স্বীকার করতে চায় না ’ - কোন কথা ইউরােপীয়রা স্বীকার করতে চায় না ? কেন চায় না ?
‘ হাঙ্গর শিকার ' প্রবন্ধে স্বামী বিবেকানন্দ ভারতের প্রাচীন ব্যাবসা বাণিজ্যের আলােচনা প্রসঙ্গে ভারতের বাণিজ্য-শিল্প যে পৃথিবীর মধ্যে সর্বোত্তম ছিল সে -কথা উল্লেখ করেছেন । তখনকার দিনে ভারত থেকে পশ্চিমি দেশগুলিতে দুনিয়ার ব্যবহার্য যত সুতি কাপড় , তুলা , পাট , নীল , লাক্ষা, চাল , হিরে , মােতি প্রভৃতি রপ্তানি হত । ভারতের মতাে পৃথিবীতে আর কোনাে দেশেই পশমি ও রেশমি কাপড় , কিংবা কিংখাব প্রভৃতি তৈরি হত না । ভারত ছিল উৎকৃষ্ট মশলার দেশ । এখানে উৎপন্ন হত লবঙ্গ , এলাচ , মরিচ , জায়ফল প্রভৃতি মশলা । ফলে দেখা গেছে অতি প্রাচীনকাল থেকে পৃথিবীর যখন যে দেশ সভ্য হয়েছে , সে দেশ তখন ওই সকল জিনিসের জন্য ভারতের ওপর নির্ভর করেছে ।
ভারতের বাণিজ্য ও রাজস্ব সম্পদে ইংরেজ বলবান বলেই , সে এখন পৃথিবীর সবার বড়াে জাত । ভারতের বাণিজ্যের কদর এখন কমেছে ঠিকই , স্বামী বিবেকানন্দের সময় থেকে প্রায় ১০০ বছর আগেও ভারতীয় বাণিজ্যের যথেষ্ট কদর ছিল । স্বামীজি দুঃখ করে বলেছেন যে, কিন্তু ইউরােপীয়রা ভারতীয় বাণিজ্য - শিল্প যে একসময় পৃথিবীর সর্বোত্তম ছিল , তা স্বীকার করতে চায় না । স্বীকৃতি পায় না ভারতের নেটিভপূর্ণ শ্রমজীবী মানুষের অতুলনীয় অবদানের কথা । মানতে চায় না তাদের যে ধন ও ঐশ্বর্য,তাদের যে সভ্যতার সহায় ও সম্পদ , সবই নেটিভপূর্ণ ভারতের অবদান । ভারতের কাছে তারা ঋণী ।
ঋণ স্বীকারের মতাে উদার মন ও কৃতজ্ঞ চিত্ত হওয়া চাই , তবেই তাে উপকারীর উপকার , ঋণদাতার ঋণ অকপটে স্বীকার করা সম্ভব । ওসব দেশ সাম্রাজ্যবাদী ও ঔপনিবেশিক লুঠেরা মনােভাবের হওয়ায় ঋণ বা কৃতজ্ঞতা স্বীকারের মনােবৃত্তির অধিকারী নয় । এজন্যও তারা ভারতের কাছে ঋণ স্বীকার করতে চায় না ।
কোন মন্তব্য নেই