শনিবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২১

সংবিধান কাকে বলে ? সংবিধানের শ্রেণী বিভাজন করো ।

 

একাদশ শ্রেণী class 11 xi eleven সংবিধান কাকে বলে সংবিধানের শ্রেণী বিভাজন করো প্রশ্নোত্তর political science suggestions songbidhan kake bole songbidhaner sreeni bivajon koro


প্রশ্ন : সংবিধান কাকে বলে ? সংবিধানের শ্রেণী বিভাজন করো ।


উত্তর:- সাধারণ ভাবে সংবিধান বলতে রাষ্ট্র পরিচালনার নিয়ম কানুন কে বোঝায় । যেকোনো প্রতিষ্ঠান বা সংগঠন কে সুষ্ঠ ভাবে পরিচালনা করতে গেলে যেমন কত গুলি সাধারণ নিয়ম কানুনের প্রয়োজন হয় , রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে রাষ্ট্রের ক্ষেত্রেও তা দেখা যায় । রাষ্ট্রের পরিচালনার জন্য একান্ত আবশ্যক এই নিয়ম কানুন গুলি হল সংবিধান ।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রদত্ত সংজ্ঞা : সংবিধানের সংজ্ঞা নিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে । লর্ড ব্রাইস সংবিধান বলতে সেই সব আইন কানুন ও রীতিনীতির সমষ্টি কে বুঝিয়েছেন , যেগুলি রাষ্ট্রীয় জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে ।  রাষ্ট্রবিজ্ঞানী সি এফ স্ট্রং এর মতে , সংবিধান হল সেই সব নিয়ম নীতির সমষ্টি যাঁর সাহায্য সরকারের ক্ষমতা , শাসিতের অধিকার এবং শাসক ও শাসিতের সম্পর্ক নির্ধারিত হয় । গিলক্রিস্ট সংবিধান বলতে এমন কথক গুলি লিখিত বা অলিখিত নিয়ম কানুনের কথা উল্লেখ করেছেন , যেগুলির মাধ্যমে সরকার গঠন , সরকারের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে ক্ষমতা বন্টন এবং বিভাগ গুলির কার্যক্ষেত্র নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয় ।


ব্যাপক ও সংক্রীন অর্থে সংবিধান : সংবিধানের সংজ্ঞা নির্ণয় করতে গিয়ে ব্যাপক ও সংক্রিন অর্থের কথাও বলা হয়ে থাকে । ব্যাপক অর্থে সংবিধান হল দেশের শাসন ব্যাবস্থা নিয়ন্ত্রণকারী সমস্ত রকম লিখিত ও অলিখিত নিয়ম কানুন । লিখিত নিয়মকানুন বলতে আইন এবং অলিখিত অলিখিত নিয়ম কানুন বলতে রীতিনীতি , প্রথা , আচার ব্যবহার প্রভৃতি কে বোঝায় । অন্যদিকে , সংক্রীন অর্থে সংবিধান বলতে শুধুমাত্র সেইসব লিখিত মৌলিক আইন কানুন কে বোঝায় যাঁর দ্বারা সরকার গঠন , সরকারের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে ক্ষমতা বন্টন ও সম্পর্ক নির্ণয় এবং রাষ্ট্রের সঙ্গে নাগরিকদের সম্পর্ক প্রভৃতি নিয়ন্ত্রিত হয় ।

সংবিধান শ্রেণীবিভাজন : সংবিধানের শ্রেণী বিভাজন নিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মধ্যে মত পার্থক্য থাকলেও , সাধারণ ভাবে দুটি প্রধান শ্রেণীতে সংবিধান কে ভাগ করার ব্যাপারে অনেকে সহমত পোষণ করেছেন । যেমন (১) সুপরিবর্তনীয় ও দুস্পরিবর্তনীয় সংবিধান এবং (২) লিখিত ও অলিখিত সংবিধান ।


সুপরিবর্তনীয় ও দুস্পরিবর্তনীয় সংবিধান : সংবিধান সুপরিবর্তনীয় ও দুস্পরিবর্তনীয় দুরকমই হতে পারে । সংবিধান সংশোধন বা পরিবর্তনের ক্ষেত্রে প্রকৃতিগত ভাবে তাদের মধ্যে যে পার্থক্য রয়েছে তাঁর ভিত্তিতে সুপরিবর্তনীয় ও দুস্পরিবর্তনীয় আখ্যা দেওয়া হয়ে থাকে । 

সুপরিবর্তনীয় : যে পদ্ধতিতে আইনসভা দেশের সাধারণ আইন পাস করে বা তার রদবদল করে , সেই পদ্ধতিতে সংবিধানের সংশোধন বা পরিবর্তন করা হলে তাকে সুপরিবর্তনীয় সংবিধান বলে । এজন্য কোনো " বিশেষ পদ্ধতি " অবলম্বনের দরকার পড়ে না । আইনসভার সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটই সংবিধান সংশোধন বা পরিবর্তন করা যায় । সুপরিবর্তনীয় সংবিধানের উদাহরণ হল ব্রিটেন , নিউজিল্যান্ড প্রভৃতি দেশ ।


দুস্পরিবর্তনীয় সংবিধান : আইনসভায় সাধারণ আইন পাসের পদ্ধতিতে যে সংবিধান কে সংশোধন বা পরিবর্তন করা যায় না , যে সংবিধান সংশোধন বা পরিবর্তন করতে গেলে " বিশেষ পদ্ধতি " অবলম্বন করতে হয় , তাকে দুস্পরিবর্তনীয় সংবিধান বলা হয় । দুস্পরিবর্তনীয় সংবিধানের দৃষ্টান্ত হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র , জাপান প্রভৃতি দেশের সংবিধানের কথা উল্লেখ করা যায় ।

লিখিত ও অলিখিত সংবিধান : সংবিধানের মৌলিক নীতিগুলি লিখিত বা অলিখিত দুই-ই হতে পারে । এই কারণেও সংবিধানের শ্রেণীবিভাজন করা হয়ে থাকে ।


লিখিত সংবিধান : দেশের শাসনব্যাবস্থার মৌলিক নীতি গুলি যেক্ষেত্রে একটি দলিলের আকারে লিপিবদ্ধ করা হয় , তাকে লিখিত সংবিধান বলে । সাধারণ একটি সংবিধান পরিষদ বা কনভেনশন এসব সাংবিধানিক মৌলিক নীতি গুলি কে লিপিবদ্ধ করার কাজ করে থাকে । বিশ্বের প্রাচীনতম লিখিত সংবিধান হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান । সুইজারল্যান্ড , ভারত , রাশিয়া প্রভৃতি দেশের সংবিধান লিখিত সংবিধানের অন্যতম উদাহরণ ।

অলিখিত সংবিধান : দেশের শাসন ব্যাবস্থার মৌলিক নীতি গুলি যখন প্রথা , আচার ব্যবহার , রীতিনীতি ও বিচারালয়ের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে গড়ে ওঠে , তখন তাকে অলিখিত সংবিধান বলে আখ্যা দেওয়া হয় । কোনো সংবিধান পরিষদ বা কনভেনশন অলিখিত সংবিধানের শাসন সম্পর্কীত মৌলিক নীতি প্রয়নের কাজ করে না । অলিখিত সংবিধানের প্রকৃষ্ট উদাহরণ হল গ্রেট ব্রিটেনের সংবিধান ।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন