মঙ্গলবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১

রাষ্ট্রবিজ্ঞান কি বিজ্ঞান ? এর পক্ষে ও বিপক্ষে যুক্তি দাও ।

 

একাদশ শ্রেণী class 11 xi eleven রাষ্ট্রবিজ্ঞান কি বিজ্ঞান এর পক্ষে ও বিপক্ষে যুক্তি দাও প্রশ্নোত্তর political science suggestions rastro biggan ki biggan pokhe bipokhe jukti dao

প্রশ্ন: রাষ্ট্রবিজ্ঞান কি বিজ্ঞান ? এর পক্ষে ও বিপক্ষে যুক্তি দাও ।


উত্তর:- সাধারণভাবে বিজ্ঞান বলতে এক সুসংবদ্ধ বিশেষ জ্ঞানকে বোঝায় । " রাষ্ট্রবিজ্ঞান " শব্দটির মধ্যে  " বিজ্ঞান " শব্দটি থাকায় অনেকদিন আগেই একটি বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছে । রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মধ্যেও এই নিয়ে সংশয় ও মতবিরোধ রয়েছে । রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে বিজ্ঞান বলা যায় কীনা , তার পক্ষে ও বিপক্ষে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা যে মতামত প্রকাশ করেছেন , তা নীচে আলোচনা করা হল ।


                       পক্ষে যুক্তি 


রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিজ্ঞান কিনা সে বিষয়ে মতামত দিতে গেলে বিজ্ঞান বলতে কি বোঝায় সে সম্পর্কে জ্ঞান থাকা দরকার । বিজ্ঞান হল কোনো বিষয়ে সুসংবদ্ধ ও সৃশৃঙ্খল জ্ঞান , যা পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষণের মাধ্যমে লাভ করা যায় ।



[  ১  ] সুসংবদ্ধ জ্ঞান : যে কোনো সুসংবদ্ধ জ্ঞানকে বিজ্ঞান আখ্যা দেওয়া হলে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও একটি বিজ্ঞান । রাষ্ট্রবিজ্ঞানেও পর্যবেক্ষণ , পরীক্ষা , শ্রেণী বিভক্তিকরন , কার্যকারণ , সম্পর্ক নির্ণয়ের মধ্য দিয়ে নাগরিকদের আচার আচরণ , রাস্ট্রের উৎপত্তি ও প্রকৃতি সম্পর্কে সুসংবদ্ধ জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব ।


[   ২  ] পর্যবেক্ষণ সম্ভব : রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনার সূত্রপাত করেছিলেন প্রাচীণ গ্রিক দার্শনিক প্লেটো ও অ্যারিস্টটল । সেই থেকেই রাজনৈতিক ব্যাবস্থা নিয়ে পর্যবেক্ষণ শুরু হয় , যা আজও চলছে । যেমন , মন্তেস্কুর ক্ষমতাস্বতন্ত্রিকরণ নীতি , গণতান্ত্রিক ব্যাবস্থার শ্রেষ্ঠত্ব ইত্যাদি বিষয় গুলি পর্যবেক্ষণ ও অভিজ্ঞতার ফল ।


[   ৩   ] পরীক্ষণ সম্ভব : রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রধান আলোচ্য বিষয় হল মানুষ । রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ মানুষকে নিয়েই নিরন্তর পরীক্ষা নিরীক্ষা করে চলেছেন । এই পরীক্ষা নিরীক্ষা মাধ্যমেই রাষ্ট্রবিজ্ঞানিগণ আদর্শ ও জনকল্যাণকর রাষ্ট্রের ছবি তুলে ধরেছেন ।




[  ৪   ] সাধারণ সূত্র প্রতিষ্ঠা : বিজ্ঞানের মতো রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ও আহরিত জ্ঞান থেকে একটি সাধারণ সূত্র প্রতিষ্ঠা করা যায় । সেই সূত্র অনেক সময়ই রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের পথ নির্দেশ করার ক্ষেত্রে সহায়ক হয় ।



[   ৫   ] সর্বজনীন বিধি প্রণয়ন : অ্যারিষ্টল , ফাইনার , ব্রাউস প্রমুখ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বিভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক জীবন পর্যালোচনা করে কয়েকটি সর্বজনীন বিধি ও পদ্ধতি প্রণয়ে প্রয়াসী হয়েছিলেন । রাষ্ট্রবিজ্ঞানের কোনো নির্দিষ্ট গবেষণাগার না থাকলেও বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক জীবনের বিবর্তন , উত্থাপনের ইতিবৃত্ত , রাজনৈতীক কাঠামোর পরিবর্তন ইত্যাদির গবেষণা সর্বজনীন বিধি প্রণয়নে সাহায্য করে ।


[  ৬   ] তথ্যনির্ভর বিশ্লেষণ : রাষ্ট্রবিজ্ঞানে শুধু তত্ত্বের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয় না , বিজ্ঞানের মতো রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ও তথ্যের ওপর নির্ভর করে সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে হয় । মানব ইতিহাসের বিভিন্ন অধ্যায়ের তথ্য গুলি বিশ্লেষণের মাধ্যমে মার্কস ও এঞ্জেলস সমাজ বিকাশের ধারার বিজ্ঞান সম্মত ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন ।



[  ৭  ] ভবিষ্যতবাণী সম্ভব : রাষ্ট্রবিজ্ঞানেও পদার্থবিদ্যা বা রসায়নবিদ্যার মতো ভবিষ্যতবাণী করা সম্ভব । যেমন , বর্তমানে বিভিন্ন গণতান্ত্রিক দেশে নির্বাচনের আগেই জনমত সমীক্ষার মাধ্যমে নির্বাচনের ফলাফল সম্পর্কে ভবিষ্যতবাণী করা হয় । এই ভবিষ্যতবাণী পুরোপুরি না মিললেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মিলে যায় ।



                     বিপক্ষে যুক্তি 


[   ১   ]  অনিশ্চিত প্রকৃতিবিশিষ্ট : রাষ্ট্রবিজ্ঞান যেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করে তাদের প্রকৃতি অনিশ্চিত , জটিল ও পরিবর্তনশীল । পদার্থবিদ্যা বা রসায়নশাস্ত্রের মতো এখানে নিখুঁত পর্যবেক্ষণ , বিশ্লেষণ ও তত্ত্ব গঠন সম্ভব নয় ।



[  ২   ] গবেষণাগারে পরীক্ষার অযোগ্য : রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচিত বিষয় গুলি কোনো নির্দিষ্ট গবেষনা গারে পরীক্ষা করা যায় না । প্রকৃত পক্ষে সমগ্র মানব সমাজই হল রাষ্ট্র বিজ্ঞানীর ইচ্ছা অনুসারে নির্মিত হয় না । একজন ভৌতবিজ্ঞানী গবেষণাগারে যেভাবে গবেষণাগার অনুকূল পরিবেশ কৃত্রিম ভাবে সৃষ্টি করতে পারেন , একজন রাষ্ট্রবিজ্ঞানীর পক্ষে তা সম্ভব নয় ।


[   ৩  ] তথ্য অপেক্ষা তত্ত্বের প্রাধান্য : বিজ্ঞানীরা যেভাবে তত্ত্ব ও তথ্যের ওপর সমান গুরুত্ব দিয়ে বৈজ্ঞানিক অনুশীলন করে থাকেন , রাষ্ট্রবিজ্ঞানে তা দেখা যায় না । রাষ্ট্রবিজ্ঞানে তথ্যের চেয়ে তত্ব বেশি প্রাধান্য পায় । রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা বৈজ্ঞানিক অনুশীলনের পরিবর্তে দার্শনিক চিন্তার উপর বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন ।


[   ৪   ] সর্বসম্মত পদ্ধতির অনুপস্থিতি : বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখার মতো সর্বসম্মত পদ্ধতি বলে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে কিছু দেখা যায় না । তাই রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতি অনুসরণ করে থাকেন ।



[  ৫   ] সংখ্যায়ণের নিরপেক্ষ নয় : রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনা কে কখনও ভৌতবিজ্ঞানের মতো সম্পুর্ন মূল্যামান নিরপেক্ষ করে গড়ে তোলা যায় না । রাষ্ট্রবিজ্ঞানীর এই প্রকার গবেষণা সমূহ তাঁর রাজনৈতিক মূল্যবোধ ও ব্যাক্তিগত বিশ্বাসের দ্বারা প্রভাবিত হয় ।


[  ৬   ]  সর্বজনীনতার অভাব : ভৌতবিজ্ঞানের গবেষণায় যেভাবে সংখ্যায়ণের সাহায্য গবেষণার ফলাফল কে প্রকাশ করা যায় , রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে গবেষণার ফলাফল সব দেশে সার্বিকভাবে প্রয়োগ করা যায় না ।




[   ৭  ] সূত্রের প্রতিষ্ঠাতা অসম্ভব : রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মৌল আলোচ্য বিষয় হল , মানুষের রাজনৈতিক আচার আচরণ । রাজনৈতিক আচার আচরণের সঙ্গে জড়িত মানুষের অনুভূতি ও আবেগ বহু ধরনের উপাদানের দ্বারা প্রভাবিত হয় । এজন্য ভৌতবিজ্ঞানের মতো কোনো সাধারণ নিয়ম বা সূত্র রাষ্ট্রবিজ্ঞানে গড়ে তোলা যায় না ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন