যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার বলতে কি বোঝ ? এর মূল বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা করো
প্রশ্ন : যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার বলতে কি বোঝ ? এর মূল বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা করো ।
উত্তর:- ক্ষমতা বিকেন্দ্রকরনের নীতির ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের উদ্ভব ঘটে । অধ্যাপক কে সি হোয়ার এর মতে , যুক্তরাষ্ট্র বলতে সেই শাসন ব্যাবস্থাকে বোঝায় যেখানে সংবিধান কতৃক কেন্দ্রীয় সরকার ও আঞ্চলিক সরকার গুলির মধ্যে এমনভাবে ক্ষমতা বন্টন করা হয় যাতে উভয় সরকার নিজ নিজ প্রশাসনিক এলাকায় স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে । রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বাঁচ যুক্তরাষ্ট্রের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন , যুক্তরাষ্ট্র হল সেই শাসন ব্যাবস্থা যেখানে যাবতীয় ক্ষমতা একটি কেন্দ্রীয় সরকার ও কয়েকটি আঞ্চলিক সরকারের মধ্যে এমনভাবে বণ্ঠিত হয় যাতে এই দু ধরনের সরকার পরস্পরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করতে পারে এবং নিজেদের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে উভয়ই প্রত্যক্ষ ভাবে জনগন কে শাসন করতে পারে ।
প্রসঙ্গগত বলা যায় , সাধারনত দুটি পদ্ধতিতে যুক্তরাষ্ট্র গড়ে ওঠে । একটি হল বিভক্তি করণের প্রক্রিয়া , যার মাধ্যমে কোনো এক কেন্দ্রিক রাষ্ট্র কয়েকটি অঙ্গরাজ্য বিভক্ত হয়ে একটি যুক্তরাষ্ট্র গঠন করে । অন্যটি হল সংহতি সাধনের প্রক্রিয়া , যার মাধ্যমে কয়েকটি সার্বভৌম রাষ্ট্র একত্রিত হয়ে নিজেদের মধ্যে চুক্তির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র গঠন করে ।
যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের বৈশিষ্ট্য সমূহ
এক বিশেষ ধরনের শাসন ব্যাবস্থা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য রয়েছে । সেই বৈশিষ্ট্য গুলি হল
দু ধরনের সরকারের উপস্থিতি : যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থায় কেন্দ্রীয় ও আঞ্চলিক এই দু ধরনের সরকারের সহাবস্থান লক্ষ করা যায় । সমগ্র দেশের শাসন কার্য পরিচালনার দায়িত্ব থাকে কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে । অন্যদিকে , বিভিন্ন অঞ্চলের শাসনের দায়িত্ব থাকে বিভিন্ন আঞ্চলিক বা অঙ্গরাজ্যের সরকারের হাতে ।
ক্ষমতা বন্টন : ক্ষমতা বন্টন যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থার অন্যতম অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য । এখানে লিখিত সংবিধানের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ও আঞ্চলিক সরকার গুলির মধ্যে শাসন ক্ষমতা সুনির্দিষ্ট ভাবে বণ্টন করা হয় ।
সংবিধান প্রাধান্য : সংবিধানকে দেশের সর্বোচ্চ মৌলিক আইনের স্বীকৃতি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে সংবিধানের প্রাধান্য স্বীকার করা হয় । এ খানে কেন্দ্রীয় ও আঞ্চলিক উভয় সরকারই সংবিধান অনুযায়ী শাসন কার্য পরিচালনা করতে বাধ্য । সংবিধানই এ খানে সমস্ত ক্ষমতার উৎস ।
যুক্তরাষ্ট্রীয় আদালত : সংবিধানের অভিভাবক ও চূড়ান্ত ব্যাখ্যা কর্তা যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থার একটি অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য । কেন্দ্রীয় ও আঞ্চলিক সরকার গুলির মধ্যে ক্ষমতা সম্পর্কিত বিষয়ে সৃষ্ট যে কোনো বিরোধের চূড়ান্ত মীমাংসা কর্তা হল এই আদালত । উভয় সরকারের কাজকর্ম সংবিধান অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে কিনা তা দেখার দায়িত্ব ও যুক্তরাষ্ট্রীয় আদালতের ।
দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা : যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থার আর একটি লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্য হল দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা । আইনসভার নিম্নকক্ষ হল জনপ্রতিনিধিত্বমূলক কক্ষ , আর উচ্চকক্ষ হল অঙ্গরাজ্য গুলির প্রতিনিধিত্বমূলক কক্ষ । উচ্চকক্ষে ছোটো বড়ো নির্বিশেষে প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের সমসংখ্যক প্রতিনিধিত্বকে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম নীতি বলে মনে করা হয় ।
স্বতন্ত্র রাজস্বব্যবস্থা : যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থায় কেন্দ্রীয় ও আঞ্চলিক উভয় সরকারেরই পর্যাপ্ত আর্থিক সংগতি থাকা প্রয়োজন । নতুবা কোনো সরকারের পক্ষেই সুষ্ঠ ভাবে দায়দায়িত্ব পালন করা সম্ভব হয় না । সেজন্য কেন্দ্র ও রাজ্যের জন্য স্বতন্ত্র রাজস্ব ব্যবস্থার উল্লেখ যুক্তরাষ্ট্রীয় সংবিধানের একটি গুরুত্ব পূর্ন বৈশিষ্ট্য ।
স্বতন্ত্র সংবিধান : অঙ্গরাজ্য গুলির জন্য পৃথক সংবিধানের অস্তিত্ব যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য । উদাহরণ স্বরূপ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৫০ টি অঙ্গরাজ্যের জন্য ৫০ টি স্বতন্ত্র সংবিধান আছে । অবশ্য অঙ্গরাজ্যের সংবিধান কে জাতীয় সংবিধানের সঙ্গে সংগতি পূর্ন হতে হয় ।
দ্দ্বৈত নাগরিকত্ব : বিশ্বের কোনো রাষ্ট্রে দ্দ্বৈত নাগরিকত্ব স্বীকৃত । দ্দ্বৈত নাগরিকত্ব বলতে একই সঙ্গে সমগ্র দেশের ও নিজ নিজ রাজ্যের নাগরিকত্ব কে বোঝায় । অবশ্য দ্দ্বৈত নাগরিকত্বকে অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য বলে স্বীকার করা হয় না ।
কোন মন্তব্য নেই