শনিবার, ৩০ জুলাই, ২০২২

অলৌকিক সন্নিকর্ষ কাকে বলে ? দৃষ্টান্ত-সহ বিভিন্ন প্রকার অলৌকিক সন্নিকর্ষের আলােচনা করাে ।

একাদশ শ্রেণী দর্শন প্রশ্নোত্তর xi class 11 philosophy Question answer অলৌকিক সন্নিকর্ষ কাকে বলে দৃষ্টান্তসহ বিভিন্ন প্রকার অলৌকিক সন্নিকর্ষের আলােচনা করাে aloukik sonnikorsho kake bole drishtantosoho bivinno prokar aloukik sonnikorsher alochona koro


উত্তর :  ন্যায়দর্শনে প্রত্যক্ষ হল দুরকম— [1 ] লৌকিক ও [2] অলৌকিক । লৌকিক প্রত্যক্ষের ক্ষেত্রে ইন্দ্রিয়ের সঙ্গে বিষয়ের লৌকিক তথা সরাসরি সন্নিকর্ষ হয় , যেমন চক্ষু নামক ইন্দ্রিয়ের সঙ্গে ঘটের সন্নিকর্ষ । অপরদিকে , অলৌকিক প্রত্যক্ষের ক্ষেত্রে ইন্দ্রিয়ের সঙ্গে বিষয়ের অলৌকিক তথা পরােক্ষ সন্নিকর্ষ সম্পন্ন হয় , যেমন — ঘট প্রত্যক্ষের ক্ষেত্রে চক্ষু নামক ইন্দ্রিয়ের সঙ্গে ঘটত্ব জাতির প্রত্যক্ষ ।

অলৌকিক সন্নিকর্ষ হল তিন প্রকার— 

[i ] সামান্য লক্ষণ সন্নিকর্ষ ।

[2] জ্ঞান লক্ষণ সন্নিকর্ষ এবং 

[3] যােগজ লক্ষণ সন্নিকর্ষ । 


[ 1 ]সামান্য লক্ষণ সন্নিকর্ষ : যে প্রত্যক্ষের ক্ষেত্রে বিষয়ের সামান্য ধর্ম তথা জাতিধর্ম সন্নিকর্ষরূপে কাজ করে , তাকেই বলা হয় সামান্য লক্ষণ সন্নিকর্ষ । অর্থাৎ , সামান্য লক্ষণ প্রত্যক্ষের ক্ষেত্রে ইন্দ্রিয়ের সঙ্গে সামান্য জাতি বা সাধারণ ধর্মের সন্নিকর্ষ হয় । এ ক্ষেত্রে সামান্য জাতি বা সাধারণ ধর্মকে কখনােই সরাসরিভাবে প্রত্যক্ষ করা যায় না । সেকারণেই এই ধরনের সন্নিকর্ষ কখনােই লৌকিক বা সরাসরিভাবে সম্পন্ন হতে পারে না । এই ধরনের সন্নিকর্ষ তাই অলৌকিক তথা পরােক্ষভাবেই সম্পন্ন হয় । সে কারণেই এই সামান্য লক্ষণ সন্নিকর্ষকে অলৌকিক সন্নিকর্ষ রুপেও অভিহিত করা হয় । ঘট প্রত্যক্ষর ক্ষেত্রে যখন ঘটত্ব জাতি বা সামান্য ধর্মের প্রত্যক্ষ হয়, তখন এই প্রকার সন্নিকর্ষই সংঘটিত হয় ।

[ 2 ] জ্ঞান সঞ্চণ সন্নিকর্ষ : পূর্বজ্ঞানের ভিত্তিতে কোনো বিষয়কে প্রত্যক্ষ করার ক্ষেত্রে সেই বিষয়ের সঙ্গে ইন্দ্রিয়ের যে অলৌকি সন্নিকর্ষ সম্পন্ন হয়, তাকেই বলা হয় জ্ঞান লক্ষণ সন্নিকর্ষ । এ ক্ষেত্রে বিষয়ের পূর্বজ্ঞানের স্মৃতিই সন্নিকর্ষের কাজ করে । বিষয়টির জ্ঞান আগে থেকেই আমাদের থাকে বলে , এই ধরনের সন্নিকর্ষকে জ্ঞান লক্ষণ সন্নিকর্ষ বলা হয় । এই ধরনের সন্নিকর্ষ সরাসরিভাবে সম্পন্ন নয় ,তা অলৌকিকভাবেই সম্পন্ন । তাই এই জ্ঞান লক্ষণ সন্নিকর্ষকে অলৌকি সন্নিকর্ষ বলা হয় । উদাহরণস্বরূপ উল্লেখ করা যায় যে , নাসিকার দ্বারাই আমরা চন্দনকাঠের সুরভি লৌকিক সন্নিকর্ষের মাধ্যমে পাই এবং বলি যে চন্দন সুরভিযুক্ত । চন্দনের সুরভি তাই নাসিকা নামক ইন্দ্রিয়ের নিজস্ব  বিষয়রূপে গণ্য । কিন্তু চন্দনকাঠ দেখেই তাকে চন্দনকাঠ হিসেবে চিনে নিয়ে যখন আমরা পূর্বজ্ঞানের ভিত্তিতে বলি যে ,চন্দন সুরভিযুক্ত, তখন সেক্ষেত্রে যে প্রকার সন্নিকর্ষ হয় তাকেই বলা হয় জ্ঞান লক্ষণ সন্নিকর্ষ । এ ক্ষেত্রে চক্ষুর সঙ্গে চন্দনের সুরভির সরাসরি বা লৌকিক সন্নিকর্ষ না হয়ে ,অলৌকিকভাবেই সম্পন্ন হয় । সেজন্যই জ্ঞান লক্ষণ সন্নিকর্ষকে অলৌকিক সন্নিকর্ষরূপে গণ্য করা হয় । 

[ 3 ] যােগজ লক্ষণ সন্নিকর্ষ : যােগসাধনার দ্বারা সিদ্ধপুরুষগন অলৌকিক শক্তির অধিকারী হন ৷ এর ফলে তারা অতীত , বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ — এই তিনটি কালের সমস্ত বস্তুই প্রত্যক্ষ করতে পারেন । এই ধরনের প্রত্যক্ষ সম্ভব হয় যােগজ সন্নিকর্ষের দ্বারা । যােগজ সন্নিকর্ষের ক্ষেত্রে অতীন্দ্রিয় বিষয়ের প্রত্যক্ষ হয় । এই অতীন্দ্রিয় বিষয়কে কখনােই আমাদের ইন্দ্রিয় দ্বারা সরাসরিভাবে প্রত্যক্ষ করা যায় না । এ ক্ষেত্রে যে প্রকার সন্নিকর্ষ হয় , তা অলৌকিকভাবে সম্পন্ন । সে কারণেই যােগজ প্রত্যক্ষকে অলৌকিক সন্নিকরূপে উল্লেখ করা হয় ।


যােগীরা অলৌকিক বিষয়সমূহ প্রত্যক্ষ করতে পারেন । সে ক্ষেত্রে যােগীদের সঙ্গে অলৌকিক বিষয়সমূহের সন্নিকর্ষ অলৌকিকরূপেই গণ্য ।







কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন