বুধবার, ১৮ আগস্ট, ২০২১

বিবেকানন্দের কর্ম যোগের ধারণায় কীভাবে প্রয়োগ মূলক বেদান্ত প্রতিফলিত হয়েছে ?

 

একাদশ শ্রেণী দর্শন class xi 11 eleven philosophy বিবেকানন্দের কর্ম যোগের ধারণায় কীভাবে প্রয়োগ মূলক বেদান্ত প্রতিফলিত হয়েছে vivekananda kormo yoger dharonai kivabe proyogmulol bedanto protifolito hoyeche

প্রশ্ন: বিবেকানন্দের কর্ম যোগের ধারণায় কীভাবে প্রয়োগ মূলক বেদান্ত প্রতিফলিত হয়েছে ?

উত্তর:- স্বামী বিবেকানন্দ কর্মের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে গীতা বা ভগবদগীতায় যে নিষ্কাম কর্মের কথা বলা হয়েছে তার কথা বলেছেন । তাঁর মতে কর্ম মানুষ যেন করে ফলাকাঙ্খা না নিয়ে । শুধুমাত্র কর্মের জন্যই কর্ম করা উচিত । কোন কিছু লোভ , কামনাও বাসনা থাকবে না ।

বিবেকানন্দ বলেছিলেন , আমাদের প্রথম কতব্য হল নিজের প্রতি ঘৃনা নয় , নিজেকে ভালোবাসতে হবে । নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখতে হবে , নিজের প্রতি বিশ্বাস না থাকলে ভগবান কে বিশ্বাস করা যায় না । তিনি বলেছেন ভয় হল দুর্বলতার প্রধান কারণ । গীতায় কথিত কর্ম যোগের এই আদর্শকেই স্বামী বিবেকানন্দ আমাদের কাছে তুলে ধরেছেন এবং বলেছেন ফলাকাঙ্খা বর্জন করে কর্মসাধণাই হল আমাদের প্রধান লক্ষ্য ।


বেদান্তের মূল তত্ত্ব : বেদান্তের সুমহান বাণী , যাকে আবিষ্কার করে সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য বিবেকানন্দ মানব শক্তিকে আহ্বান করেছেন সেটি হল " সোহহম্ " আমিই সেই । স্বামীজির মতে  , এই সূত্রের ব্যাখ্যার সঠিক প্রয়োগ হলে বিশ্ববাসী একটি বৃহৎ মালায় পরিণত হবে । বেদান্তের মূল তত্ত্ব তিনটি একত্ত্ব , অন্তনিহিত দেবত্ব ও স্বাধীনতা । বিবেকানন্দ " সোহহম্ " পদের ব্যাখ্যার দ্বারা এই তিনটি তত্ত্ব কে একত্রিত করেছেন । এই ব্যাখ্যার মাধ্যমে তিনি প্রয়োগমূলক বেদান্ত বা ফলিত বেদান্তের স্বরূপ তুলে ধরেছেন ।

একত্ব : বেদান্তের মূল কথা হল একত্ব , অভেদ বা অখন্ডভাব । এই বিশ্বে একটিমাত্র সত্তার অস্তিত্ব আছে । তা হল ব্রহ্ম বা ঈশ্বর । বিবেকানন্দ বেদান্তের মূল সূত্রের ব্যাখ্যার এই সত্য তুলে ধরেছেন " সোহহং " পদের দ্বারা । তাঁর মতে , জীবাত্মা ও পরমাত্মার মধ্যে কোন ভেদ নেই । সব মানুষ সমভাবে ব্রহ্মের সঙ্গে অভিন্ন । জাতি , ধর্ম , সম্প্রদায় নির্বিশেষে সবাই সমান । এ খানে কেউ পাপী নয় , কেউ অপবিত্র বা দুর্বল নয় । মানুষের যে পার্থক্য তা পরিমাণগত , প্রকারগত নয় ।


অন্তনিহীত দেবত্ব : আত্মামাত্রই অব্যক্ত ব্রহ্ম । সব মানুষের হৃদয়ে এক অখন্ড আত্মা বিরাজমান , একই ব্রহ্মসত্তার বিকাশ । তাই বিশ্বের সব মানুষ পরস্পরের ভাই । আমরা সবাই সচ্চিদানন্দ ব্রহ্ম বা মহামানবের তরঙ্গ থেকে উদ্ভূত । ব্যক্তিসত্তার সঙ্গে সমভাবে অভিন্ন । সব মানুষই ঈশ্বর । ব্রহ্ম বহুর মধ্যে এক । আবার এক হয়েও বহুরূপে সামনে রয়েছেন ।

স্বাধীনতা : বেদান্তের তৃতীয় তত্ত্ব হল স্বাধীনতা , যার আর এক নাম মুক্তি । এ খানে মুক্তি বলতে বন্ধন থেকে মুক্তি কে বোঝায় । মুক্তি হল আত্মার স্বরূপে অবস্থান , আত্মার ব্রহ্মভাবের পরিপূর্ন বিকাশ , দেবত্ব উত্তরণ । কিন্তু অজ্ঞানের বশবর্তী হয়ে সচ্চিদানন্দ ব্রহ্মস্বরূপ জীব সংসার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে অশেষ দুঃখ , কষ্ট ভোগ করে । একেই বলে আত্মার বন্ধন , আর বন্ধন থেকে মুক্তি পাওয়াই স্বাধীনতা ।


স্বামী বিবেকানন্দ গীতার কর্মযোগের আদর্শকেই আমাদের কাছে তুলে ধরেছেন । তিনি বলেছেন আমাদের প্রথম কর্তব্য হল নিজের প্রতি ঘৃনা নয় , নিজের প্রতি বিশ্বাস প্রদর্শন করা , তবেই ঈশ্বর কে বিশ্বাস করা সম্ভব হয় । বিবেকানন্দের বাণী আমরা আমাদের জীবনে যদি কিছুটা হলেও পালন করতে সক্ষম হয় , তাহলে এই ভারতবর্ষে কিছুটা হলেও শান্তি ফিরে আসতে পারে । তিনি বলেছেন ভয়ই আমাদের দুর্বলতার প্রধান কারণ । 

সর্বশেষে , বিবেকানন্দের একটি বাণী বলে শেষ করব - " তমি যাহা চিন্তা করিবে , তাহাই হইয়া যাইবে । যদি তুমি নিজেকে দুর্বল ভাব , তবে দুর্বল হইবে । তেজস্বী ভাবিলে তেজস্বী হইবে ।" 

বেদান্ত দর্শনের আদর্শ দ্বারা প্রভাবিত হয়েও কর্মযোগের সমন্বয়ে কর্মযজ্ঞের সূচনা করেছিলেন বিবেকানন্দ । এরই ফলস্বরূপ বিভিন্ন সমাজ সংস্কার মূলক কর্মকান্ড , আত্মমুক্তির থেকেও বহুর কল্যাণসাধনের গুরুত্ব ইত্যাদি ধারণার দ্বারা প্রায়োগিক বেদান্তের সূচনা ।

1 টি মন্তব্য: