‘মা’র কতদিন দ্বীপান্তর ? ' — মা - এর পরিচয় দিয়ে তার দ্বীপান্তরের কারণ আলােচনাসহ বন্দিদশার বর্ণনা দাও ।
উত্তর : বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘ দ্বীপান্তরের বন্দিনী ’ কবিতার প্রশ্নোধৃত অংশের ‘মা’ হলেন ভারতরূপিণী বাকদেবী সরস্বতী ।
সরস্বতী হলেন বাক , ভাষা বা বাণীর দেবী । স্বাধীনতাকামী ভারত -সন্তান, যাঁরা বিদেশি শাসনের , শােষণ -তাড়নের বিরুদ্ধে ও স্বাধীনতার জন্য আন্দোলনে সােচ্চার ছিলেন , সত্যভাষণে ছিলেন নির্ভীক, বিদেশি সরকার তাঁদের পাঠাতেন দ্বীপান্তরে । তাঁদেরই প্রতীক হলেন বাক - ভারতী সরস্বতী । আন্দামানের সেলুলার জেলে দ্বীপান্তরিত বন্দিদের সশ্রম কারাদণ্ড ভােগ করতে হত নির্মম অত্যাচারিত হয়ে । উদ্দেশ্য ছিল সরকারের বিরুদ্ধে কোনােরকম বিক্ষোভ , আন্দোলন, সত্যভাষণ , লেখাজোখা চলবে না ।
ভারতমাতা বাকভারতী দ্বীপান্তরে দেড়শাে বছর বন্দিনী । তিনি মুক্ত হয়ে ফিরে না আসায় তাঁর । পুণ্যবেদি শূন্য । সেখানে উঠেছে ক্রন্দনধ্বনি । সাত সমুদ্র তেরাে নদীর পারে দ্বীপান্তরের স্থান আন্দামান । রুপাের কাঠির কঠিন স্পর্শে মায়ের রূপের কমল স্লান, বিবর্ণ । অস্ত্রধারীর অস্ত্রের আঘাতে মায়ের পদ্ম শতচ্ছিন্ন । যন্ত্ৰী রক্ষী বসিয়ে বীণার তার কাটছে । সেখান থেকে তারহীন সেতারে কি মুক্ত-বন্ধ সুর এসেছে ? বন্দিনী বাকদেবীর বাণী কি আজ মুক্ত ? অত্যাচারী ও নিষ্ঠুর রক্ষপুরী কি ধ্বংস হয়েছে ? যক্ষপুরীর রৌপ্য পঙ্কে কি মায়ের রূপকমল ফুটেছে ? কামান -গােলার সিসা - স্তূপে কি বাকদেবীর কাচের প্রাসাদ গড়ে উঠেছে ? রক্তাক্ত খুনখারাপি কি শান্তির পবিত্র স্পর্শে শ্বেতপদ্ম হয়ে উঠেছে ? যদি তা না হয় , তাহলে কীসের কাতর ক্রন্দন,কীসের উচ্চ শঙ্খধ্বনি ?
আন্দামানে বাকভারতী দিনরাত্তির ঘানি টানছে । সেই ঘানি থেকে জীবন চুয়ানাে ঘানির তেল আনা হয়েছে কি হােমানলে আহুতি দেওয়ার জন্যে ? তেমনি সত্যভাষীকে অন্যায় বিচারের মার খেতে হচ্ছে । সত্যকথা বললেই বন্দি হতে হয় । অত্যাচারিত হয়েও অত্যাচারের কথা বলা যায় না । বিদ্রোহী আখ্যা পেতে হয় ।
কোন মন্তব্য নেই