কমলাকান্ত ভট্টাচার্য কবি কৃতিত্ব পরিচয় দাও
উত্তর :- খ্যাতনামা শ্যামা সঙ্গীতের কমলাকান্ত ভট্টাচার্য আনুমানিক ১৭৭২ - ১৮২১ খিস্টাব্দে তার গভীর ভক্তি ও আন্তরিকতা সমৃদ্ধ গানের জন্যে বাংলা শাক্ত সাহিত্যে স্মরণীয় হয়ে আছেন । তার পৈতৃক নিবাস বর্ধমান জেলার কালনা গ্রামে । " সাধক রঞ্জন " নামে তার একটি বিখ্যাত তান্ত্রিক কবিতা গ্রন্থ আছে । তিনি সাধন ভজন করতেন , টোল খুলে সংস্কৃত বিদ্যা দান করতেন এবং অবসর সময়ে শ্যামা সঙ্গীত রচনা করতেন ।
[ ] কমলাকান্তের ভনিতায় প্রায় তিন" শ পদ পাওয়া গেছে । তার আগমনী ও বিজয়ার গান গুলি অতি চমৎকার , রাম প্রসাদের চেয়েও কাবাংশে উৎকৃষ্ট । মেনোকা পাষাণ হৃদয় স্বামী গীরিরাজের কাছে অনুযোগ করেন , কেন তিনি কন্যা কে পিত্রালয়ে আনছেন না । অবশেষে গিরিরাজ উমাকে এনে দিলেন মেনোকার কাছে -
" গিরি রানী , এই নাও তোমার উমারে ।
ধর ধর হরের জীবন ধন ।।"
[ ] মা মেনকা কন্যা উমাকে নিয়ে আদর যত্ন করেন । কিন্তু নবমীর নিশি অবসান হতে না হতেই হর এসে উমাকে নিয়ে যাবার জন্য প্রস্তুত হন । তখন মা মেনকা ব্যাকুল হয়ে বলে ওঠেন -
" ফিরে চাও গো উমা তোমার বিধুমুখ হেরি ।
অভাগানি মায়েরে বধিয়া কথা যাও গো ।"
[ ] বাঙালি মায়ের কন্যা বিরহের বাস্তব বেদনা গান গুলিতে একটা শতন্ত্র মানবিক মাধুর্য দান করেছে ।
[ ] কালিকার স্বরূপ এবং কবির নিজস্ব ধ্যান ধারণা সংক্রান্ত কয়েকটি গান " সদানন্দময়ী কালী মহাকালের মনো মোহিনী গো মা ", " শুকনো তরু মঞ্জুরে না ভয় লাগে মা ভাঙ্গে পাচ্ছে ", গো মা ', মজিল মন ভ্রমরা কালীপদ নীল কমলে " প্রভূতি গানের ভাষা ও বিন্যাস পদ্ধতি অতিশয় মার্জিত ও সঙ্গবোধ । কবি কিছু বৈষ্ণবপদও লিখেছেন । আবেগ , কল্পনা , ভক্তিভাব ও রচনারীতির এমন সুষ্ট সম্নদোয় রাম প্রসাদ কে ছেরে দিলে আর কোন শাক্ত পদ কারের রচনায় পাওয়া যাবে না । অষ্টাদশ শতাব্দীর নৈতিক অর্ধ পতনের দিনে গান গুলির ভাব , ভাষা ও ভক্তি শুভ আদর্শ বলা যেতে পারে । এক যুগের হতাশ বাঙালির প্রাণে নব আশার উদ্দীপনা সঞ্চারী ।
কোন মন্তব্য নেই