বৃহস্পতিবার, ২৪ মার্চ, ২০২২

মহাভারতের ক -টি পর্ব ও কী কী মহাভারতের সাহিত্যিক মূল্য পর্যালােচনা করাে

একাদশ শ্রেণী সংস্কৃত সাহিত্যের ইতিহাস সংস্কৃত প্রশ্নোত্তর class11Sanskrit question answer class xi class eleventh মহাভারতের কটি পর্ব ও কী কী মহাভারতের সাহিত্যিক মূল্য পর্যালােচনা করাে mahabharater koti porbo o ki ki mahabharater sahitya mullo porjalochona koro

উত্তর : মহাভারতের ১৮ টি পর্ব । যথা — আদি , সভা , বন , বিরাট , উদ্যোগ , ভীষ্ম, দ্রোণ, শল্য , কর্ণ, সৌপ্তিক , স্ত্রী,শান্তি, অনুশাসন , আমেধিক , আশ্রমবাসিক , মৌষল , মহাপ্রস্থানিক এবং স্বর্গারােহণ ।

মহর্ষি বেদব্যাস প্রণীত মহাভারত প্রসিদ্ধ ভরতবংশের সামগ্রিক ইতিহাসের মহৎ কাহিনি । মহত্ত্বও ভারবত্ত্বের দিক দিয়ে বিচার করলে এটি একটি সুবিশাল ‘মহাকাব্য’ । রচনাশৈলী এবং কাহিনির বিচারে মহাভারত ইতিহাস ও পুরাণ । এই গ্রন্থেই  সমগ্র রচনাকে জয় , সংহিতা , আখ্যান , উপাখ্যান , ইতিহাস , কাব্য প্রভৃতি আখ্যায় ভূষিত করা হয়েছে । এটি প্রাচীন ভারতের পঞ্চমবেদ , ধর্মশাস্ত্র , কামশাস্ত্রও মােক্ষশাস্ত্র—অর্থাৎ ভারতকোশ । অজস্র আখ্যান -উপাখ্যানের ভাণ্ডারস্বরূপ এই মহাকাব্যটি ভারতীয় সাহিত্যের অগণিত পাঠকের নিকট যেমন অতিশয় মনােহারী , তেমনি ধর্মশাস্ত্ররূপেও ভারতীয় জনমানসে এর অমূল্য অবদান আছে । সাহিত্যের আদর্শে ও ধর্মীয় দৃষ্টিকোণে ভারতযুদ্ধ শুধুমাত্র জ্ঞাতিবিবাদের ভয়ংকর সংগ্রাম নয় , এটি ধর্মযুদ্ধ । কুরুক্ষেত্র কুরুক্ষেত্র নয়, এটি ধর্মক্ষেত্র । মহাভারতের সামাজিক আদর্শ ও রীতিনীতির ধারা ,জাতিগত ও রাষ্ট্রগত ভেদবৈচিত্র্য থেকে তৎকালীন সমাজকাঠামাে ও জীবনযাত্রা পদ্ধতির বহুমুখী রূপ প্রত্যক্ষগােচর হয় । সুতরাং , মহাভারতের সাহিত্যিক মূল্য অপরিমেয় ।


 মহাভারতের কাহিনি অবলম্বনে খ্রিস্টপূর্ব যুগ থেকে খ্রিস্টীয় ষােড়শ - সপ্তদশ শতক পর্যন্ত অসংখ্য কাব্য, নাটক , মহাকাব্য , চম্পূ প্রভৃতি রচিত হয়েছিল । উক্ত রচনাগুলির মধ্যে প্রধান প্রধান গ্রন্থগুলির নাম উল্লেখ করা বাঞ্ছনীয় । ভারবির কিরাতাৰ্জুনীয় , মাঘের শিশুপালবধ , শ্রীহর্ষের নৈষধচরিতম , ক্ষেমেন্দ্রের মহাভারতমঞ্জরী , নীতিবর্মার কীচকবধ, বাসুদেবের যুধিষ্ঠিরবিজয়, এবং অমরচন্দ্র সূরির বালভারতম প্রভৃতি মহাকাব্য বিশেষরূপে প্রসিদ্ধ ।

 

মহাভারত প্রসিদ্ধ ‘নল - দময়ন্তী’ কাহিনি অবলম্বনে রচিত ছােটো - বড়াে ২৭ টি নাটক এবং একাধিক চম্পুকাব্য পাওয়া যায় । মহাকবি ভাসের মধ্যমব্যায়ােগ , দূতবাক্যম্ , ঊরুভঙ্গম , কর্ণভার , দূতঘটোৎকচ , পঞরাত্রম নামক কালিদাসের অভিজ্ঞানশকুন্তলম্‌ , ভট্টনারায়ণের বেণীসংহার , কুলশেখরের সুভদ্রাধনঞ্জয়ম্, কুমারপালের দ্রৌপদীস্বয়ংবরম্ প্রভৃতি নাটকগুলি সংস্কৃত নাট্যজগতে বিশেষ খ্যাতিলাভ করেছে । 


নব্য ভারতীয় সাহিত্যেও মহাভারতের প্রভাব ও অবদান অনস্বীকার্য । তার প্রধান নিদর্শন বাংলা ভাষায় রচিত সর্বজনপ্রিয় কাশীরাম দাসের  ‘মহাভারত’ । সেই সঙ্গে বাংলা ভাষায় রচিত কবীন্দ্র পরমেশ্বরের ‘পাণ্ডববিজয় ’ শ্রীকর নন্দীর ‘ অশ্বমেধকথা ’ গ্রন্থ দুটির নামও শ্রদ্ধাসহকারে উল্লেখ করা যায় । 


মহাভারতের ভীষ্মপর্বীয় ‘ শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা ’- কে সকল উপনিষদের সারবস্তু বলা হয়েছে এবং এটি এখন শ্রেষ্ঠ ধর্মগ্রন্থের স্থান পেয়েছে । 

মহাভারতের অমৃতবাণী , মহাভারতের শিক্ষা , মহাভারতের উপদেশ এবং মহাভারতের আখ্যান - উপাখ্যান যুগ যুগ ধরে কবিচিত্তকে আকর্ষণ করেছে । এই গ্রন্থের রসধারায় পরিপুষ্ট সংস্কৃত কবিগণ প্রাচীন সাহিত্যের আঙ্গিক , আদর্শ , বহিরঙ্গ উপাদান এবং অন্তরঙ্গ বৈশিষ্ট্য ও ভাবধারাকে আত্মসাৎ করে নতুন ধারায় নব নব সাহিত্যের সৃষ্টিকরেছেন ।


বৈশম্পায়নের নিম্নোক্ত উক্তিটিই মহাভারতের শ্রেষ্ঠত্বের কথা প্রচার করেছে

      “ ধর্মে চার্থে চ কামে চ মােক্ষে চ ভরতৰ্ষভ ।   

       যদিহাস্তি তদন্যত্র যন্নেহান্তি ন তৎ কৃচিৎ ।। ”


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন