উত্তর: খ্রিস্টপূর্ব যুগের এক বিরল প্রতিভাধর পণ্ডিত হলেন পঞ্চতন্ত্র -এর লেখক বিষ্ণুশর্মা । রূপকথা ও গল্পের কল্পলােকে মানুষের অতৃপ্ত বাসনা , অপূর্ণ শক্তি, অসাধ্য ক্ষমতা এবং অবিশ্বাস্য ঘটনা সবই মনােজগতে পরিপূর্ণ সার্থক হয়ে ওঠে । মানুষের মনে গল্প-কাহিনির আকর্ষণ চিরন্তনকালের । বাস্তবের চেয়ে গল্পে বর্ণিত কল্পনার জগৎ অধিক রমণীয় । সেটি লক্ষ্য করেই কবি পশুপাখির মুখে কথা ফুটিয়ে গল্প রচনা করেছেন । রাজা অমরশক্তির তিন জড়বুদ্ধিসম্পন্ন পুত্রকে শাস্ত্রজ্ঞ করে তোলার জন্য কবির ‘ পঞ্চতন্ত্রম ’ রচনা । ছােটো ছােটো গল্পের মাধ্যমে তিনি বালকদের ধর্মশাস্ত্র এবং নীতিশাস্ত্রের উপদেশ দিয়েছেন । পশুপাখির রূপকের মধ্য দিয়ে তিনি সমাজের জ্ঞানী-গুণী,শঠ ধূর্ত ,ভণ্ড- প্রতারক -সকল মানুষের চরিত্র সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন । তাঁর কাব্যে গল্পের রাজ্যে বাস্তব ও কল্পনার আশ্চর্য সংমিশ্রণ ঘটেছে । অঘটনঘটনপটীয়সী কল্পনার রঙে রাঙানাে সর্বসাধারণের চিত্তবিনােদনের অমূল্য উপকরণরূপে চেতন ও জড় জগতের মনুষ্য ও মনুষ্যেতর সকলকে নিয়েই কথাসাহিত্যের বিচিত্র রসের কারবার । তাঁর রচিত সাহিত্যের উপাদান ও বৈশিষ্ট্য অনুধাবন করলে তার বহুধা বৈচিত্র্য লক্ষ্য করা যায় । ধর্ম,রাজনীতি ও সমাজনীতির আদর্শ , গুরুগম্ভীর ও লঘুচপল বক্তব্য, ব্যঙ্গ-কৌতুক প্রভৃতি সর্বজনবােধ্য ভাষার মাধ্যমে উপস্থাপিত ।
[ ] কবি তাঁর গ্রন্থের কথামুখে বলেছেন— “এতৎ পঞতন্ত্র বালকদের নাম নীতিসারং বালকবােধনার্থং ভূতলে প্রবৃত্ত । ” বালকদের অববোধনের জন্য তাঁর রচনা । সুতরাং , তাঁর ভাষা সহজ , সরল এবং সুপাঠ্য । তিনি নিজের পাণ্ডিত্য জাহির করার কোথাও সুদীর্ঘ সমাসের দ্বারা , নানাবিধ অলংকার প্রয়োগের দ্বারা দুরুচ্ছায শব্দের দ্বারা গ্রন্থটিকে পাঠকদের কাছে দুর্বোধ্য করে তোলেননি । তাঁর ভাষা সহজ সরল অথচ হৃদয়গ্রাহী । গ্রন্থখানি বালক বালিকারা যতই পড়ে , ততই তারা আনন্দে আপ্লুত হয় । ‘পঞ্চতন্ত্রম’ এর ভাষা সহজ , অনাড়ম্বর । গল্পের অঙসৌষ্টব সন্নন্ধ এবং নীতি আদর্শের ভাবনা শিল্পসম্মতভাবে বিন্যস্ত ।
[ ] মূল রচনা গদ্যে নিবন্ধ , মাঝে মাঝে নীতি উপদেশাত্মক শ্লোকসংযুক্ত । উক্ত শ্লোকগুলি প্রাচীণ যুগেই বিশেষ জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল এবং মহাভারত , স্মৃতিপুরাণ প্রভৃতি গ্রন্থে এ জাতীয় বহূ শ্লোক উদ্বৃত আছে ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন