উত্তর : ‘অচলায়তন ’ নাটকটিকে অভিনয়ের উপযােগী সহজ করার উদ্দেশ্যে নাট্যকার রবীন্দ্রনাথ নাটকটিকে কিছুটা রূপান্তরিত করে , কিছুটা লঘুতর করে নতুন রূপ দেন । নাটকটির নাম দেন ‘ গুরু'। ‘গুরু’ নাটকের ভূমিকায় রবীন্দ্রনাথ ছােট্ট একটি বাক্যে লিখেছেন , “সহজে অভিনয় করিবার অভিপ্রায়ে অচলায়তন নাটকটি ‘ গুরু ' নামে এবং কিঞ্চিৎ রূপান্তরিত এবং লঘুতর আকারে প্রকাশ করা হইল ।” ‘ অচলায়তন ' নাটকটি লেখা হয়েছিল ১৯১১ খ্রিস্টাব্দের মে -জুন মাসে । ওই বছরই প্রবাসীর আশ্বিন সংখ্যায় ‘অচলায়তন’ প্রকাশিত হয় । গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় ২ আগস্ট ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে । ‘ অচলায়তন ’ প্রকাশের প্রায় পাঁচ বছর পরে ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট - সেপ্টেম্বর মাসে ‘ অচলায়তন ’- এর রূপান্তরিত ও নতুন নাট্যরূপ ‘গুরু’ রচনা করেন রবীন্দ্রনাথ । ‘ অচলায়তন ’- এর ছাপা একখানা বইয়ের ওপর পরিমার্জন করে ও প্রয়ােজনে সাদা কাগজে লিখে নাট্যরূপটি গড়ে তােলা হয় । ‘ গুরু ' নাটকের সম্পূর্ণ অংশটি ‘পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ’ বিভাগের অন্তর্ভুক্ত করে একাদশ শ্রেণির পাঠ্য করা হয়েছে ।
বাংলা লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
বাংলা লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
বুধবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২
মঙ্গলবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২
উত্তর : আলােচ্য দুটি উদ্ধৃতি প্রখ্যাত মালয়ালম কবি আইয়াপ্পা পানিকরের লেখা ‘শিক্ষার সার্কাস’ কবিতা থেকে গৃহীত ।
[ ] এদেশীয় বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষাজীবনের শুরু থেকে পরীক্ষা পাসের প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু হয়ে যায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে । একজন অপরজনকে টপকে ক্লাসের সিড়ির ধাপ ভেঙে ওপরে উঠতে থাকে পরীক্ষায় পাস করে । প্রথম জন প্রথম শ্রেণি থেকে দ্বিতীয় শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হলে , দ্বিতীয় জন দ্বিতীয় শ্রেণি পার হয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে যায় । এভাবে পরীক্ষায় পাসের খেলায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা ভালােই জমে ওঠে । তাতেই ‘এক , দুই , তিন ....চার’ গণনা চলে ক্লাস অতিক্রমের । চতুর্থ শ্রেণিতে এসে প্রাথমিকের পর্যায় শেষ হয়ে যায় । ধাপ -ভাঙা অঙ্কের মতাে শিক্ষার্থী পরের ধাপে ওঠার জন্য মনের দৃঢ়তা নিয়ে বলে , ‘ যদি সব শ্রেণি শেষ হয়ে যায়,/ আমি তবু পরের শ্রেণিতে যাব । প্রাথমিকের পর মাধ্যমিক , উচ্চমাধ্যমিক , কলেজীয় শিক্ষার কত স্তর কত শ্রেণি ! পরীক্ষায় পাসের পর পাস করতে করতে শিক্ষার্থীর চলমানতা অব্যাহত থাকে । কবি এভাবেই প্রশ্নের দুটি উদ্ধৃতির অর্থগত পরম্পরা চমৎকারভাবে রক্ষা করেছেন ।
প্রশ্নের শেষ উদ্ধৃতির পরেই কবি বলেছেন
‘ সব শিক্ষা একটি সার্কাস
যার সাহায্যে আমরা পরের শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হই ।’
[ ] অর্থাৎ , কবি সব শিক্ষাকে সার্কাসের সঙ্গে তুলনা করেছেন । শিক্ষা হল ক্রীড়াচক্র । সার্কাসে চক্রাকার ক্রীড়াঙ্গনে ঘুরে ঘুরে খেলা দেখানাে হয় । ওভাবেই পরীক্ষার মাধ্যমে শ্রেণির পর শ্রেণি টপকে উত্তীর্ণ হয় শিক্ষার্থীরা । প্রতিদ্বন্দ্বিতার মনােভাব নিয়ে ক্লাসে উত্তীর্ণ হওয়ার যেন খেলা চলতে থাকে । প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক , মাধ্যমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক এভাবে বিভিন্ন শিক্ষাস্তর অতিক্রম করে বিদ্যার্থীরা । শিক্ষাস্তর অতিক্রম করাই হল তাদের ধ্যান - জ্ঞান । জ্ঞানার্জন হল কিনা তা তাদের লক্ষ্য নয় ।
সোমবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২২
উত্তর : খ্যাতনামা মালয়ালম কবি আইয়াপ্পা পানিকর কবিতার নাম দিয়েছেন ‘শিক্ষার সার্কাস’। কবিতার নামকরণটি কতখানি যথাযথ ও সার্থক,তা আমাদের আলােচ্য বিষয় ।
[ ] কবি সাম্প্রতিক ভারতীয় শিক্ষার চালচিত্র খানিকটা অপ্রত্যক্ষ প্রতিযােগিতার শর্তসাপেক্ষে ও হেঁয়ালির রহস্যঘন ভঙ্গিতে উপস্থাপিত করেছেন । প্রথম শিক্ষার্থীর প্রথম শ্রেণি থেকে দ্বিতীয় শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হওয়ার শর্তসাপেক্ষে দ্বিতীয় শিক্ষার্থীর দ্বিতীয় শ্রেণিতে পৌছানাের ব্যাপারটা নির্ভর করছে । একইভাবে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিতে পাসের ব্যাপারটাও যেন পারস্পরিক শর্তনির্ভর । একটাই ভালাে লক্ষণ যে , একটা চোরা স্রোতের মতাে অপ্রত্যক্ষ প্রতিযােগিতা ভিতরে ভিতরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্রিয়াশীল । অবশ্য প্রাথমিক শিক্ষাস্তরের সব শ্রেণি অতিক্রমের পরেও শিক্ষার্থীর শিক্ষা ব্যাপারে চলমানতা অব্যাহত । কারণ তারপরও শিক্ষার্থীর উক্তি :‘ আমি তবু পরের শ্রেণিতে যাব ।’ অবশ্যই যাবে । কারণ তারপরও মাধ্যমিক , উচ্চমাধ্যমিক , কলেজীয় প্রভৃতি শিক্ষার কত স্তর, কত শ্রেণিই তখনও বাকি ।
[ ] কবি এদেশীয় সাম্প্রতিক শিক্ষা সম্পর্কে ব্যঙ্গ্যোক্তি করলেন : ‘সব শিক্ষা একটি সার্কাস ।’ সার্কাস হল ক্রীড়াচক্র । অর্থাৎ , চক্রাকার বা বৃত্তাকার ক্রীড়াক্ষেত্রে অশ্বাদি ক্রীড়া উপাদান নিয়ে ক্রীড়াবিদরা ক্রীড়া প্রদর্শন করে থাকেন । এদেশীয় শিক্ষার্থীরা যেন সার্কাসের মতাে বৃত্তাকার ক্ষেত্রে শ্রেণির পর শ্রেণি টপকে এগিয়ে চলেছে । শিক্ষার এই চক্রাকার বাঁধাধরা পথটাই হল নীরস , নিরানন্দ , সে অর্থে প্রাণহীন জ্ঞানহীন , পুথিসর্বস্ব । বৃত্তাকার ঘূর্ণায়মান চলমান শক্তি শিক্ষার স্তর ও শ্রেণি টপকাতে সাহায্য করছে ঠিকই । শিক্ষাও হচ্ছে , কিন্তু শিক্ষার প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য জ্ঞানার্জন, চেতনার বিকাশ — তা অর্জিত হচ্ছে না । শিক্ষার্থীর ব্যর্থতার এই যে ধোকাসর্বস্ব মহা ফাঁকি , সে -কথা কে মনে রাখে ? সবাই আপাতদৃষ্টিতে দেখছে , শিক্ষা এগিয়ে চলেছে চক্রাকার বাঁধাধরা যান্ত্রিক পথে সার্কাসের বৃত্তাকার ক্ষেত্রে ‘মা ফলেষু কদাচন’ ঔদাস্যে । কাজেই ব্যঙ্গার্থে হলেও কবিতার ‘শিক্ষার সার্কাস’ নামকরণ যথাযথ ও সার্থক ।
রবিবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২২
উত্তর : উদ্ধৃত চরণটি প্রখ্যাত মালয়ালম কবি আইয়াপ্পা পানিকরের লেখা ‘ শিক্ষার সার্কাস ' কবিতার অংশবিশেষ । কবি দীর্ঘকাল অধ্যাপনা করেছেন । ভারতীয় শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে ওতপ্রােতভাবে জড়িত ছিলেন । শিক্ষাসংক্রান্ত তাঁর কবি -ভাবনা ‘শিক্ষার সার্কাস’ কবিতাটিতে চমৎকার প্রকাশিত হয়েছে । আলােচ্য উদ্ধৃত পঙক্তিটিতে তার প্রতিফলন লক্ষ্যণীয় ।
[ ] এদেশীয় বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষাজীবনের শুরু থেকে পরীক্ষা পাসের প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু হয়ে যায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে । একজন অপরজনকে অতিক্রম করে ক্লাসের সিঁড়ির ধাপ ভেঙে ওপরে উঠতে থাকে পরীক্ষায় পাস করে । প্রথম জন প্রথম শ্রেণি থেকে দ্বিতীয় শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হলে , দ্বিতীয় জন দ্বিতীয় শ্রেণি পার হয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে যায় । এভাবে পরীক্ষায় পাসের খেলায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা ভালােই জমে ওঠে । তাতেই ‘এক , দুই, তিন ......চার’ গণনা চলে ক্লাস অতিক্রমের । চতুর্থ শ্রেণিতে এসে প্রাথমিক স্তর শেষ হয়ে যায় । ধাপ -ভাঙা অঙ্কের মতাে শিক্ষার্থী পরের ধাপে ওঠার জন্য মনের দৃঢ়তা নিয়ে বলে , ‘ যদি সব শ্রেণি শেষ হয়ে যায়,/আমি তবু পরের শ্রেণিতে যাব ।’ প্রাথমিকের পর মাধ্যমিক , উচ্চমাধ্যমিক , কলেজীয় শিক্ষার কত স্তর, কত শ্রেণি । পরীক্ষায় পাসের পর পাস করতে করতে শিক্ষার্থীর চলমানতা অব্যাহত থাকে ।
শনিবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২২
উত্তর : ‘ গুরু ’ নাটকে গুরুর উপস্থিতি নেপথ্যে কিংবা স্বশরীরে নাটকের শুরু থেকে শেষ অবধি । তাঁরই নামে নাটকের নামকরণ । তিনি অসীম , অনন্ত ও সর্বশক্তির আধার । অন্যায়- অবিচারের বিরুদ্ধে, জীর্ণ প্রাণহীন সমাজকে ধ্বংস করার কাজে তিনি খরগহস্ত রুদ্র । জ্ঞান-কর্ম ভক্তির সমন্বয়ে সাধনাকে সফল করে জগৎ ও জীবনকে গতিশীল করার কাজে তিনি শক্তিমান পরমসুন্দর । একাধিক রূপে তাঁর প্রকাশ । তিনি গুরু, তিনি দাদাঠাকুর , তিনিই গোঁসাই । অথচ তিনি একই । জ্ঞানমার্গের আয়তনিকদের কাছে তিনি গুরু, কর্মমার্গের যুনকদের কাছে তিনি দাদাঠাকুর , আর ভক্তিমার্গের দর্ভকদের কাছে তিনি গোঁসাই । প্রকৃতপক্ষে তিন মার্গের মানুষই নিজ নিজ ক্ষেত্রে অচলায়তনের ঘেরাটোপে আবদ্ধ । গুরু তিন রূপে হাজির হয়ে তিনেরই সাধনপথের বাধা সরিয়ে জ্ঞান-কর্ম- ভক্তির ত্রিবেণি সংগম ঘটিয়েছেন । তিনি জ্ঞানমার্গীদের অচলায়তনের পাষাণ প্রাচীর গুঁড়িয়ে দিয়েছেন যােদ্ধৃবেশে । দীর্ঘদিনের প্রথা ও সংস্কারের মূল উপড়ে ফেলেন তিনি । বাইরের জগৎ ও জীবনের সঙ্গে মিলন ঘটিয়ে শুষ্ক প্রাণহীন জ্ঞানচর্চায় তিনি এনেছেন সরসতা ও জীবনের প্রাণােচ্ছ্বাস।