দর্শন লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
দর্শন লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

বুধবার, ৩ আগস্ট, ২০২২

‘ জানা ’ শব্দটি কী কী অর্থে ব্যবহার করা হয় ?

একাদশ শ্রেণী দর্শন প্রশ্নোত্তর xi class 11 philosophy Question answer জানা শব্দটি কী কী অর্থে ব্যবহার করা হয় jana sobdoti ki ki arthe babohar kora hoi

উত্তর :  জ্ঞানের প্রকৃতি বা স্বরূপকে যথাযথভাবে উপলব্ধি করতে হলে ‘জানা’ শব্দটির বিভিন্ন অর্থ ও প্রয়ােগ সম্পর্কে আমাদের সচেতন থাকা উচিত । আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় ‘জানা ’ ক্রিয়াপদটিকে বিভিন্ন অর্থে প্রয়ােগ করে থাকি । এই ‘ জানা’ বা ‘জ্ঞান’ শব্দটি যেসব অর্থে প্রযুক্ত হতে পারে , তা নীচের উদাহরণগুলি থেকে প্রমাণিত –

[ 1 ] আমি একাদশ শ্রেণির ছাত্র রাম রায়কে জানি ।

[ 2 ] আমি মােটরগাড়ি চালাতে জানি । 

[ 3 ] আমি জানি যে পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে ঘােরে ।

[         ] এই তিনটি উদাহরণে ‘জানা ’ শব্দটি প্রযুক্ত হলেও তিনটি ক্ষেত্রেই ‘জানা ’ শব্দটি কখনােই একই অর্থে প্রযুক্ত হয়নি । কারণ , প্রথম উদাহরণটির ক্ষেত্রে ‘ জানা’ শব্দটি ‘পরিচিতি অর্থে’ বােঝানাে হয়েছে । দ্বিতীয় উদাহরণটির ক্ষেত্রে জানা পদটি ‘কর্মকুশলতার অর্থে’ প্রযুক্ত হয়েছে । আর তৃতীয় উদাহরণটির ক্ষেত্রে জানা পদটি একটি সত্য ঘটনাকে ভাষায় উপস্থাপিত করার অর্থে তথা ‘ বাচনিক অর্থে উল্লেখ করা হয়েছে । জানার এই ত্রিবিধ অর্থকে নীচে পর্যায়ক্রমিকভাবে সংক্ষেপে আলােচনা করা হল – 

[ 1 ] পরিচিতি অর্থে জানা : আমাদের প্রাত্যহিক অভিজ্ঞতায় দেখা যায় যে, কোনাে প্রকারের পরিচিতি অর্থে ‘জানা ’ ক্রিয়াপদটি ব্যবহৃত হয় । এরূপ অর্থে ‘ জানা ’ শব্দটির অর্থ হল সাক্ষাৎ পরিচিতি । কোনাে ব্যক্তি বা বস্তু সম্পর্কে আমাদের যদি কোনাে সাক্ষাৎ পরিচিতি বা অভিজ্ঞতা থাকে , তাহলে আমরা ওই ব্যক্তি বা বস্তুকে চিনি বা জানি বলে দাবি করতে পারি । যেমন — ‘আমি একাদশ শ্রেণির ছাত্র রাম রায়কে চিনি বা জানি ’, ‘আমি মন্দিরা রায় কে চিনি বা জানি’ ইত্যাদি । এভাবে জানার মাধ্যমে কখনােই জানার সামগ্রিক অর্থটি পরিস্ফুট হয় না । শুধুমাত্র জানার একটি দিকই উন্মােচিত হয় । সুতরাং , এই অর্থে জানাই কিন্তু সব জানা নয় । 



[ 2 ]কর্মকুশলতার অর্থে জানা : ‘জানা’ শব্দটির অপর একটি অর্থ হল ‘কর্মকুশলতার অর্থ ’ । এই ধরনের জ্ঞানের ক্ষেত্রে ‘ জানা’ শব্দটির মাধ্যমে কোনাে কর্মকুশলতা তথা কর্মনৈপুণ্যকেই বােঝানাে হয়ে থাকে । এরূপ জানার মাধ্যমে কোনাে কাজ করার ক্ষমতা তথা দক্ষতাকেই সূচিত করা হয় । যেমন —‘ আমি মােটরগাড়ি চালাতে জানি ’ ,‘ আমি সাঁতার কাটতে জানি ইত্যাদি । এই সমস্ত ক্ষেত্রে কীভাবে মােটরগাড়ি চালাতে হয় তার কৌশলটি আমার জানা আছে , অথবা কীভাবে সাঁতার কাটতে হয় তার প্রক্রিয়াটি আমার জানা আছে — তা বােঝানাে হয়েছে । 

[ 3 ] বাচনিক অর্থে জানা : এক্ষেত্রে ‘ জানা ’ শব্দটিকে বাচনিক জ্ঞানের অর্থে উল্লেখ করা হয়েছে । জ্ঞানের বা জানার যে তিনপ্রকার অর্থ বা ব্যবহারের উল্লেখ করা হয়েছে , তাদের মধ্যে এই বাচনিক জ্ঞানই হল সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ । এরূপ অর্থে ‘ জানা ’ হল একটি বচনকে জানা এবং সেই বচনটিকে সত্য বলে জানা । আমরা যদি কোনাে নির্দিষ্ট ঘটনামূলক বৈশিষ্ট্যকে জানি এবং যদি এটাও জানি যে, ওই বৈশিষ্ট্যটি কোনাে -এক ঘটনার মধ্যে বর্তমান , তাহলে আমরা সেক্ষেত্রে জানার যে অর্থটিকে প্রয়ােগ করি , তা হল তার বাচনিক অর্থ । যেমন— ‘ আমি জানি যে পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে ঘােরে ’, ‘আমি জানি যে রবীন্দ্রনাথ সাহিত্যে নােবেল প্রাইজ পেয়েছেন’ ইত্যাদি । এই অর্থে জানার বিষয়টিকে সর্বদাই একটি বচনের আকারে উপস্থাপিত করা হয় । বাচনিক অর্থে জানার বিষয়টি সর্বদাই সত্য অথবা মিথ্যারূপে নির্ণীত হতে পারে । দর্শনের ক্ষেত্রে এই বাচনিক জ্ঞানের ওপরই সবিশেষ গুরুত্ব আরােপ করা হয়েছে ।








মঙ্গলবার, ২ আগস্ট, ২০২২

বাচনিক জ্ঞানের বিভিন্ন শর্ত কী ? বাচনিক জ্ঞানের আবশ্যিক ও পর্যাপ্ত শতগুলি উল্লেখ করো ।

একাদশ শ্রেণী দর্শন প্রশ্নোত্তর xi class 11 philosophy Question answer বাচনিক জ্ঞানের বিভিন্ন শর্ত কী বাচনিক জ্ঞানের আবশ্যিক ও পর্যাপ্ত শতগুলি উল্লেখ করো bachonik gganer bivinno shotto ki bachonik gganer aboshik o porjapto shottoguli ullekh koro


উত্তর : দর্শনের ক্ষেত্রে আমরা জ্ঞান বলতে মূলত বাচনিক জ্ঞানকেই বুঝে থাকি । কিন্তু প্রশ্ন হল, কোন্ কোন্ শর্ত উপস্থিত থাকলে বাচনিক জ্ঞান লাভ করা যায় ? অথবা বলা যেতে পারে যে, বাচনিক জ্ঞানের কোন্ কোন্ শর্তগুলির মধ্যে একটিও অনুপস্থিত থাকলে জ্ঞান লাভ করা সম্ভব হবে না ? অথবা বলা যায় যে , পর্যাপ্ত শর্তের পরিপ্রেক্ষিতে কোন কোন শর্ত উপস্থিত থাকলে বাচনিক জ্ঞান লাভ করা হবেই ? আরও সহজ করে বলা যায় , বাচনিক জ্ঞানের আবশ্যিক  ও পর্যাপ্ত  শর্তগুলি কী ? 

[       ] ধরা যাক , P হল একটি বচন । এই P নামক বচনটিকে জানার পশ্চাতে কতকগুলি শর্ত থাকে । এই শর্তগুলির পরিপ্রেক্ষিতেই আমরা P নামক বচনটিকে জেনেছি । এ প্রসঙ্গে জন হসপার্স উল্লেখ করেন যে ,কোনাে বচন যথা P- কে সত্য বলে জানতে গেলে তিনটি শর্তকে অবশ্যই পূরণ করতে হয় । এই তিনটি শর্ত হল যথাক্রমে –

[ 1 ] P নামক বচনটি অবশ্যই সত্য হবে । 

[ 2 ] P নামক বচনটির সত্যতায় জ্ঞাতার বিশ্বাস থাকতে হবে । এবং 

[ 3 ] P নামক বচনটি যে সত্য, তার সমর্থনে পর্যাপ্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ বা যুক্তি থাকতে হবে । 

[       ]  প্রথম শর্তটির পরিপ্রেক্ষিতে আমরা যখন কোনাে বিষয় বা বচনকে জানি বলে দাবি করি , তখন সেই বচনটিকে অবশ্যই সত্য হতে হবে । কারণ , ওই বচনটি যদি বাস্তবে মিথ্যারূপে গণ্য হয়, তবে তাকে আমরা জেনেছি বলে কখনোই দাবি করতে পারি না । ‘এরূপ পর্তের পরিপ্রেক্ষিতে তাই বাচনিক জ্ঞানের বিষয়টিকে নীচের উদাহরনের সাহায্যে উপস্থাপিত করা যায় –


            S জানে  P কে । 
          
            : P হয় সত্য । অথবা P নয় সত্য । 
           
            : S জানে না P কে ।
          
 [       ]  বাচনিক জ্ঞানের দ্বিতীয় শর্তের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা যখন কোনাে বচন (P) কে জানি বলে দাবি করি , তখন বচনটিকে শুধুমাত্র সত্য হলেই হবে না, বচনটির সত্যতায় জ্ঞাতার বিশ্বাসও থাকতে হবে । এরূপ শর্তের পরিপ্রেক্ষিতে তাই বাচনিক জ্ঞানের  বিষয়টিকে নীচের উদাহরণের সাহায্যে উপস্থাপিত করা যায় –
 
          S জানে যে P সত্য । 
          
          : S বিশ্বাস করে যে P সত্য ।
 
[ 3 ] বাচনিক জ্ঞানের তৃতীয় শর্তের পরিপ্রেক্ষিতে কোনাে একটি বচন হয়তাে সত্য হতে পারে , আবার ওই বচনটির সত্যতায় জ্ঞাতার বিশ্বাসও থাকতে পারে কিন্তু তা সত্বেও বচনটি কখনােই জ্ঞানের মর্যাদা লাভ করতে পারে না । কারণ , এরূপ বিশ্বাসের সমর্থনে উপযুক্ত তথ্য বা সাক্ষ্যপ্রমান চাই । উপযুক্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ ছাড়া বচনটির ক্ষেত্রে কোনাে নিশ্চয়তা থাকে না । এভাবেই আমরা বলতে পারি যে , তথ্যনিষ্ঠ সত্যবিশ্বাসই হল জ্ঞান । সুতরাং জ্ঞানের বিষয়টিকে নীচের আকারে উপস্থাপিত করা যায় – জ্ঞান বা জানা = সত্যতা + বিশ্বাস + যথার্থ সাক্ষ্যপ্রমাণ বা তথ্যপ্রমাণ । 
[         ]  বাচনিক জ্ঞানের ক্ষেত্রে ওপরের যে তিনটি শর্তের উল্লেখ করা হয়েছে , তাদের প্রত্যেকটি শর্তই জানার ক্ষেত্রে আবশ্যিক শর্তরূপে গণ্য হয় । কারণ , এই তিনটি শর্তের একটিও যদি অনুপস্থিত থাকে ,তাহলে কখনােই জ্ঞান অর্জন সম্ভব নয় । আর যে শর্তের অনুপস্থিতির ফলে জ্ঞানটিরও অনুপস্থিতি ঘটে , তাকেই বলা হয় অবিশ্যিক শর্ত । অপরদিকে , বাচনিক জ্ঞানের ক্ষেত্রে কেবল এই তিনটি শর্ত থাকলেই জ্ঞানলাভ হতে পারে বলে এদের একসঙ্গে বলা হয় জানার বা জ্ঞানের পর্যাপ্ত শর্ত ।



সোমবার, ১ আগস্ট, ২০২২

কর্মযােগের আদর্শ কী ? আলোচনা করো ।

একাদশ শ্রেণী দর্শন প্রশ্নোত্তর xi class 11 philosophy Question answer কর্মযােগের আদর্শ কী আলোচনা করো kormoyoger adorsho ki alochona koro


উত্তর : স্বামী বিবেকানন্দ ১৮৯৬ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত তার কর্মযােগ গ্রন্থে কর্ম সম্বন্ধে বিশদে আলােচনা করেছেন । তিনি কর্মযোগের মাধ্যমেই আমাদের মুক্তিলাভের কথা বলেছেন ।
[ 1 ] মুক্তিই জীবনের চরম লক্ষ্য : বেদান্ত ধর্মের মহানভাব এই যে , আমরা বিভিন্ন পথে সেই একই চরম লক্ষ্যে উপনীত হই । এই পথগুলি হল— কর্ম , ভক্তি,যােগ ও জ্ঞানের পথ । কিন্তু এ কথা অবশ্যই মনে রাখা দরকার যে , এই সমস্ত পথ কখনােই বাঁধাধরা কিছু নয় এবং অত্যন্ত পৃথকও নয় । একটি অন্যগুলির সঙ্গে অত্যন্ত সহজেই মিশে যেতে পারে ।এমন কোনাে লোকই দেখা যায় না, যার কর্ম করার শক্তি ব্যতীত আর অন্য কিছু নেই । এমন কোনাে ভক্ত নেই, যার ভক্তি ছাড়া আর কিছুই নেই । আবার এমন কোনাে ব্যক্তি নেই , যার জ্ঞান ছাড়া আর কিছুই নেই । এই ধরনের বিভাগ কেবলমাত্র মানুষের গুণ বা প্রবণতার প্রাধান্য অনুযায়ীই করা হয় । কিন্তু শেষপর্যন্ত এই চারটি পথ একই ভাবের অভিমুখে মিলিত হয় । এই চরম ভবিটি হল মানুষের মােক্ষ বা মুক্তি । 

[ 2 ] কর্মযােগ মােক্ষলাভের এক নীতি ও প্রণালী : প্রত্যেকটি ধর্মেই মুক্তির জন্য প্রাণপণ চেষ্টার বিষয়টি আমরা লক্ষ করি । এ হল সমুদয় নীতি ও নিঃস্বার্থপরতার ভিত্তি । নিঃস্বার্থপরতার অর্থ হল আমি কেবলই আমার এই শরীর — এই ভাব থেকে মুক্ত হওয়া । মানুষ তখন অনন্তস্বরূপ হয়ে যায় । এই অনন্ত বিস্তৃতিই হল সকল ধর্মের, সকল নীতি শিক্ষার এবং দর্শনের মূল লক্ষ্য । নিঃস্বার্থ কর্ম দ্বারা মুক্তি লাভ করাই হল কর্মযােগ । সুতরাং প্রত্যেক স্বার্থপূর্ণ কার্যই আমাদের সেই লক্ষ্যে পৌঁছােনাের পথে বাধাস্বরূপ । আর নিঃস্বার্থভাবে কর্মই আমাদেরকে সেই লক্ষ্যে টেনে নিয়ে যায় । সেকারণেই স্বামী বিবেকানন্দ নৈতিকতার সংজ্ঞায় বলেছেন , যা স্বার্থশূন্য তাই নীতিসংগত , আর যা স্বার্থযুক্ত তাই নীতিবিরুদ্ধ । সুতরাং , কর্মযােগ হল নিঃস্বার্থপরতা ও সৎকর্ম দ্বারা মুক্তি লাভ করার এক নীতি ও প্রণালী । 

[ 3 ] কর্মযােগের একমাত্র উদ্দেশ্য হিসেবে নিরন্তরভাবে নিষ্কাম কম : কর্মযােগীর কোনাে নির্দিষ্ট ধর্মমতে বিশ্বাস করার আবশ্যকতা নেই । তিনি ঈশ্বর বিশ্বাসী হন বা না-হন ,তাতে কিছুই যায় আসে না । তাকে কোনাে মতবাদের সাহায্য না নিয়েও , কেবলমাত্র কর্ম দ্বারা সমস্যার সমাধান করতে হয় । স্বামী বিবেকানন্দ তাই তার কর্মযােগে বলেছেন যে , জগৎযন্ত্রের চক্র থেকে পালিয়ে না গিয়ে , এর ভিতরে থেকেই কর্মের রহস্য সম্বন্ধে শিক্ষা নিতে হবে । জগৎযন্ত্ররূপ চক্রের মধ্য দিয়েই আমাদের মুক্তির দিকে এগিয়ে যেতে হবে । এক্ষেত্রে তাই একমাত্র উপায় হল অনাসক্ত হয়ে , সমুদয় কর্মের ফল ত্যাগ করে ,নিষ্কামভাবে নিরন্তর কর্ম করা । আর এখানেই কর্মযােগের আদর্শটি নিহিত । 


[ 4 ] প্রকৃত কর্মযােগীরূপে বুদ্ধদেব : বিবেকানন্দ এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করেছেন বুদ্ধদেবের কথা , যিনি কর্মযােগের আদর্শকে কার্যে পরিণত করেছেন । বিবেকানন্দ বলেন যে , বুদ্ধ ব্যতীত জগতের অন্যান্য মহাপুরুষগণ বাহ্য প্রেরণার বশেই নিঃস্বার্থ কর্মে প্রবৃত্ত হয়েছেন । বহির্জগৎ থেকেই তারা পুরস্কার আশা করেছেন । কিন্তু একমাত্র বুদ্ধদেবই অন্তরের প্রেরণা থেকে নিঃস্বার্থভাবে কর্ম করেছেন । তিনি ঈশ্বর বা আত্মতত্ত্বে মাথা ঘামাননি , তিনি শুধুমাত্র সকলকে সৎকর্ম করার পরামর্শ দিয়েছেন । তিনি আরও বলেছেন যে , মানুষের সৎকর্মই মানুষকে মুক্তি দেবে । বুদ্ধদেব একজন দার্শনিক হয়েও , তুচ্ছতম ও নিম্নতম প্রাণীর জন্যও সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন । নিজের জন্য তিনি কিছুই দাবি করেননি । প্রকৃতপক্ষে তিনিই হলেন আদর্শ কর্মযােগী । বিবেকানন্দ তাই বলেন যে, অভিসন্ধি ছাড়া যিনি কর্ম করেন , তিনি একজন বুদ্ধদেবে পরিণত হন এবং কর্মযােগের প্রকৃত আদর্শকে বহন করেন । এরূপ ব্যক্তিই হলেন কর্মযােগের চরম আদর্শের দৃষ্টান্ত ।






রবিবার, ৩১ জুলাই, ২০২২

ন্যায়মতে ব্যাপ্তি কাকে বলে ? ব্যাপ্তি জ্ঞানের উপায়গুলি কী কি ?

একাদশ শ্রেণী দর্শন প্রশ্নোত্তর xi class 11 philosophy Question answer ন্যায়মতে ব্যাপ্তি কাকে বলে ব্যাপ্তি জ্ঞানের উপায়গুলি কী কি nnaymote bapti kake bole bapti gganer upayguli ki ki


উত্তর : ব্যাপ্তি শব্দটির আক্ষরিক অর্থ হল ব্যাপকতা বা বিস্তৃতি । এই ব্যাপকতা বা বিস্তৃতি হল পদের ব্যাপকতা । একটি পদ ব্যাপক হতে পারে , আবার তা ব্যাপ্যও হতে পারে । যার দ্বারা ব্যাপ্ত হয় , তাকেই বলা হয় ব্যাপক , আর যা ব্যাপ্ত হয় তাকেই বলা হয় ব্যাপ্য । ব্যাপ্তি হল এই ব্যাপ্য ও ব্যাপকের মধ্যে একপ্রকার সম্বন্ধ । অনুমানের ক্ষেত্রে হেতু তথা ধোঁয়াকে বলা হয় ব্যাপ্য আর সাধ্য তথা আগুনকে বলা হয় ব্যাপক । 

[           ] সহচর নিয়মরূপে ব্যাপ্তি : ন্যায়দর্শনে ব্যাপ্তিকে ব্যাপ্য ও ব্যাপকের মধ্যে সহচর নিয়মরূপে উল্লেখ করা হয়েছে । ব্যাপ্তির প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সাধ্য ও হেতুর সহচর দর্শন খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় । দুটি বিষয় যদি সহগামী হয় , তবে তাদের সম্বন্ধকে বলা হয় সহচর সম্বন্ধ । হেতু ও সাধ্য সহগামী বলেই এদেরকে সহচররূপে উল্লেখ করা হয়েছে । এই দুটি সহচারের অন্তঃস্থিত সম্বন্ধকেই বলা হয় সহচর নিয়ম । এরূপ সহচর নিয়মই হল ব্যাপ্তি । সুতরাং , ‘যেখানে যেখানে ধোঁয়া আছে , সেখানে সেখানে আগুন আছে ’ — এরূপ হেতু ও সাধ্যের সহচার নিয়মকেই বলা হয় ব্যাপ্তি সম্বন্ধ । 


[           ]  ব্যাপ্তিগ্রহের উপায় কী ? অর্থাৎ, কীভাবে ব্যাপ্তি সম্বন্ধের জ্ঞান প্রতিষ্ঠা করা যায় ? এরূপ প্রশ্নের উত্তরে নৈয়ায়িকগণ নীচের পদ্ধতিগুলির উল্লেখ করেছেন 

[            ] অম্বয় : ‘অন্বয়’ শব্দটির অর্থ হল মিল বা সাদৃশ্য । দুটি বিষয়ের একসঙ্গে উপস্থিতিই হল অন্বয় । ধোঁয়া এবং আগুন — এ দুটিই যদি একসঙ্গে উপস্থিত হয় ,তাহলে দাবি করা যায় যে ,ধোঁয়া এবং আগুনের মধ্যে অন্বয় বা মিল আছে । এরই পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে —যেখানে যেখানে ধোঁয়া আছে , সেখানে সেখানে আগুন আছে । আর এরূপ অন্বয়মূলক সম্বন্ধের পরিপ্রেক্ষিতে উল্লেখ করা যায় যে , ধোঁয়া ও আগুনের (হেতু ও সাধ্যের ) মধ্যে ব্যাপ্তি সম্বন্ধ আছে । 



[             ] ব্যতিরেক : ব্যাপ্তি জ্ঞানের উপায় হিসেবে ব্যতিরেকের কথা নৈয়ায়িকেরা বলেছেন । ব্যতিরেক শব্দটির অর্থ হল দুই বিষয়ের একত্র অনুপস্থিতি । অর্থাৎ , একটি না থাকলে ,অন্যটিও থাকে না । এই ব্যতিরেক নিয়মের সাহায্যেই আমরা বলতে পারি যে, যেখানে যেখানে ধোঁয়া নেই , সেখানে সেখানে আগুনও নেই । এরূপ ব্যতিরেক সহচর সম্বন্ধের পরিপ্রেক্ষিতেই দাবি করা যায় যে ,ধোঁয়া এবং  আগুনের ( হেতু ও সাধ্যের ) মধ্যে ব্যাপ্তি সম্বন্ধ প্রতিষ্ঠিত হতে পারে । 


[            ] ব্যভিচারাগ্রহ : ব্যভিচার শব্দটির অর্থ হল নিয়মবিরুদ্ধ বিপরীত দৃষ্টান্ত । আর আগ্রহ শব্দটির অর্থ হল অদর্শন । অর্থাৎ ,যে দুটি ঘটনার মধ্যে ব্যাপ্তি তথা সহচর সম্বন্ধ প্রতিষ্ঠা করা হয় , তাদের মধ্যে এমন কোনাে নিয়মবিরুদ্ধ বিপরীত দৃষ্টান্ত দেখা যাবে না —যেখানে একটি আছে , অথচ অন্যটি নেই । ধোঁয়া আছে অথচ আগুন নেই এমনটি তাই হতে পারে না । ব্যাপ্তি জ্ঞানের এরূপ শর্তটিকেই বলা হয় ব্যভিচারাহ (ব্যভিচার + অগ্রহ ) । 




[           ] উপাধি নিরাস : ব্যাপ্তি সম্বন্ধের ক্ষেত্রে কোনাে উপাধি তথা শর্ত থাকে না । উপাধি শব্দের অর্থ হল শর্ত এবং নিরাস শব্দের অর্থ হল হীন বা নাই । দুটি বিষয়ের মধ্যে যে কোনাে প্রকার শর্ত নেই , এমন নিশ্চিত হলে তবেই ওই দুটি বিষয়ের মধ্যে ব্যাপ্তি সম্বন্ধ আছে বলে মানা যাবে । দুটি বিষয়ের মধ্যে যে নাই ( উপাধি নিরাস ) তা, জানা যায় বারংবার একই বিষয়ের দর্শন অর্থাৎ ভূয়ােদর্শনের মাধ্যমে । দুটি বিষয় শর্তহীন হলে তবেই তাদের মধ্যে ব্যাপ্তি সম্বন্ধ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব । 


[          ] তর্ক : ব্যাপ্তি সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার আরও একটি উপায় বা শর্ত হিসেবে নৈয়ায়িকগণ তর্ক - কে উল্লেখ করেছেন । ধোঁয়া ও আগুনের মধ্যে যে ব্যাপ্তি সম্পর্ক আছে , বর্তমানকালে প্রত্যক্ষ করা সম্ভব হলেও অতীত বা ভবিষ্যৎকালেও যে সম্ভব হবে , সেই বিষয়ে সংশয় থাকতেই পারে । এই সংশয় নিরসনের জন্যই নৈয়ায়িকগণ তর্কের আশ্রয় গ্রহণ করেছেন । এই তর্ক হল এক প্রকারের আনুমানিক পরােক্ষ পদ্ধতি । এর সাহায্যে মূল প্রতিপাদ্য বিষয়ের বিরুদ্ধ বচনকে অসত্যরূপে প্রমাণ ক'রে পরােক্ষে ওই মূল বাক্যের সত্যতাকেই প্রমাণ করা হয় । এরূপ পদ্ধতির দ্বারা হেতু ও সাধ্যের মধ্যে ব্যাপ্তি জ্ঞান প্রতিষ্ঠিত হতে পারে । 



[          ] সামান্য লক্ষণ প্রত্যক্ষ : ব্যাপ্তি জ্ঞানকে সমস্ত রকম সংশয় থেকে মুক্ত করার প্রয়াসে নৈয়ায়িকগণ সামান্য লক্ষণ প্রত্যক্ষের উল্লেখ করেছেন । এটাই হল ব্যাপ্তি সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার সর্বশেষ স্তর । পূর্বের পাঁচটি পদ্ধতি অবলম্বন করে হেতু ও সাধ্যের মধ্যে যে ব্যাপ্তি সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করা হয়, তাকে নৈয়ায়িকগণ সামান্য লক্ষণ প্রত্যক্ষের মাধ্যমে আরও নিশ্চিত করেছেন ।






শনিবার, ৩০ জুলাই, ২০২২

অলৌকিক সন্নিকর্ষ কাকে বলে ? দৃষ্টান্ত-সহ বিভিন্ন প্রকার অলৌকিক সন্নিকর্ষের আলােচনা করাে ।

একাদশ শ্রেণী দর্শন প্রশ্নোত্তর xi class 11 philosophy Question answer অলৌকিক সন্নিকর্ষ কাকে বলে দৃষ্টান্তসহ বিভিন্ন প্রকার অলৌকিক সন্নিকর্ষের আলােচনা করাে aloukik sonnikorsho kake bole drishtantosoho bivinno prokar aloukik sonnikorsher alochona koro


উত্তর :  ন্যায়দর্শনে প্রত্যক্ষ হল দুরকম— [1 ] লৌকিক ও [2] অলৌকিক । লৌকিক প্রত্যক্ষের ক্ষেত্রে ইন্দ্রিয়ের সঙ্গে বিষয়ের লৌকিক তথা সরাসরি সন্নিকর্ষ হয় , যেমন চক্ষু নামক ইন্দ্রিয়ের সঙ্গে ঘটের সন্নিকর্ষ । অপরদিকে , অলৌকিক প্রত্যক্ষের ক্ষেত্রে ইন্দ্রিয়ের সঙ্গে বিষয়ের অলৌকিক তথা পরােক্ষ সন্নিকর্ষ সম্পন্ন হয় , যেমন — ঘট প্রত্যক্ষের ক্ষেত্রে চক্ষু নামক ইন্দ্রিয়ের সঙ্গে ঘটত্ব জাতির প্রত্যক্ষ ।

অলৌকিক সন্নিকর্ষ হল তিন প্রকার— 

[i ] সামান্য লক্ষণ সন্নিকর্ষ ।

[2] জ্ঞান লক্ষণ সন্নিকর্ষ এবং 

[3] যােগজ লক্ষণ সন্নিকর্ষ । 


[ 1 ]সামান্য লক্ষণ সন্নিকর্ষ : যে প্রত্যক্ষের ক্ষেত্রে বিষয়ের সামান্য ধর্ম তথা জাতিধর্ম সন্নিকর্ষরূপে কাজ করে , তাকেই বলা হয় সামান্য লক্ষণ সন্নিকর্ষ । অর্থাৎ , সামান্য লক্ষণ প্রত্যক্ষের ক্ষেত্রে ইন্দ্রিয়ের সঙ্গে সামান্য জাতি বা সাধারণ ধর্মের সন্নিকর্ষ হয় । এ ক্ষেত্রে সামান্য জাতি বা সাধারণ ধর্মকে কখনােই সরাসরিভাবে প্রত্যক্ষ করা যায় না । সেকারণেই এই ধরনের সন্নিকর্ষ কখনােই লৌকিক বা সরাসরিভাবে সম্পন্ন হতে পারে না । এই ধরনের সন্নিকর্ষ তাই অলৌকিক তথা পরােক্ষভাবেই সম্পন্ন হয় । সে কারণেই এই সামান্য লক্ষণ সন্নিকর্ষকে অলৌকিক সন্নিকর্ষ রুপেও অভিহিত করা হয় । ঘট প্রত্যক্ষর ক্ষেত্রে যখন ঘটত্ব জাতি বা সামান্য ধর্মের প্রত্যক্ষ হয়, তখন এই প্রকার সন্নিকর্ষই সংঘটিত হয় ।

[ 2 ] জ্ঞান সঞ্চণ সন্নিকর্ষ : পূর্বজ্ঞানের ভিত্তিতে কোনো বিষয়কে প্রত্যক্ষ করার ক্ষেত্রে সেই বিষয়ের সঙ্গে ইন্দ্রিয়ের যে অলৌকি সন্নিকর্ষ সম্পন্ন হয়, তাকেই বলা হয় জ্ঞান লক্ষণ সন্নিকর্ষ । এ ক্ষেত্রে বিষয়ের পূর্বজ্ঞানের স্মৃতিই সন্নিকর্ষের কাজ করে । বিষয়টির জ্ঞান আগে থেকেই আমাদের থাকে বলে , এই ধরনের সন্নিকর্ষকে জ্ঞান লক্ষণ সন্নিকর্ষ বলা হয় । এই ধরনের সন্নিকর্ষ সরাসরিভাবে সম্পন্ন নয় ,তা অলৌকিকভাবেই সম্পন্ন । তাই এই জ্ঞান লক্ষণ সন্নিকর্ষকে অলৌকি সন্নিকর্ষ বলা হয় । উদাহরণস্বরূপ উল্লেখ করা যায় যে , নাসিকার দ্বারাই আমরা চন্দনকাঠের সুরভি লৌকিক সন্নিকর্ষের মাধ্যমে পাই এবং বলি যে চন্দন সুরভিযুক্ত । চন্দনের সুরভি তাই নাসিকা নামক ইন্দ্রিয়ের নিজস্ব  বিষয়রূপে গণ্য । কিন্তু চন্দনকাঠ দেখেই তাকে চন্দনকাঠ হিসেবে চিনে নিয়ে যখন আমরা পূর্বজ্ঞানের ভিত্তিতে বলি যে ,চন্দন সুরভিযুক্ত, তখন সেক্ষেত্রে যে প্রকার সন্নিকর্ষ হয় তাকেই বলা হয় জ্ঞান লক্ষণ সন্নিকর্ষ । এ ক্ষেত্রে চক্ষুর সঙ্গে চন্দনের সুরভির সরাসরি বা লৌকিক সন্নিকর্ষ না হয়ে ,অলৌকিকভাবেই সম্পন্ন হয় । সেজন্যই জ্ঞান লক্ষণ সন্নিকর্ষকে অলৌকিক সন্নিকর্ষরূপে গণ্য করা হয় । 

[ 3 ] যােগজ লক্ষণ সন্নিকর্ষ : যােগসাধনার দ্বারা সিদ্ধপুরুষগন অলৌকিক শক্তির অধিকারী হন ৷ এর ফলে তারা অতীত , বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ — এই তিনটি কালের সমস্ত বস্তুই প্রত্যক্ষ করতে পারেন । এই ধরনের প্রত্যক্ষ সম্ভব হয় যােগজ সন্নিকর্ষের দ্বারা । যােগজ সন্নিকর্ষের ক্ষেত্রে অতীন্দ্রিয় বিষয়ের প্রত্যক্ষ হয় । এই অতীন্দ্রিয় বিষয়কে কখনােই আমাদের ইন্দ্রিয় দ্বারা সরাসরিভাবে প্রত্যক্ষ করা যায় না । এ ক্ষেত্রে যে প্রকার সন্নিকর্ষ হয় , তা অলৌকিকভাবে সম্পন্ন । সে কারণেই যােগজ প্রত্যক্ষকে অলৌকিক সন্নিকরূপে উল্লেখ করা হয় ।


যােগীরা অলৌকিক বিষয়সমূহ প্রত্যক্ষ করতে পারেন । সে ক্ষেত্রে যােগীদের সঙ্গে অলৌকিক বিষয়সমূহের সন্নিকর্ষ অলৌকিকরূপেই গণ্য ।