সোমবার, ৪ এপ্রিল, ২০২২

গদ্যসাহিত্যে দণ্ডীর অবদান উল্লেখ করাে

একাদশ শ্রেণী সংস্কৃত প্রশ্নোত্তর সাজেশন class 11 Sanskrit question answer class xi class eleventh গদ্যসাহিত্যে দণ্ডীর অবদান উল্লেখ করাে goddo sahitya dondir obodan koro



উত্তর :  গদ্যকাব্যের জগতে দণ্ডী, বাণ এবং সুবন্ধুরই একচ্ছত্র আধিপত্য । সুতরাং , এই কবিত্রয়ের পূর্বে গদ্যকাব্যের অস্তিত্ব থাকলেও এই তিন কবির লেখনীতে গদ্যকাব্যের যে সুবর্ণযুগ দেখা যায় , তা নিঃসন্দেহে পূর্বসূরিদের প্রতিভাকে ম্লান করে দিয়েছে  এই তিন কবিকেই মূলত গদ্যকাব্যের পথিকৃৎ বলা যায় । 
        “ এয়াে দণ্ডিপ্রবন্ধাশ্চ ত্ৰিষু লােকেষু বিশুতাঃ । ” — এই উক্তি থেকে স্পষ্টতই বােঝা যায়, দণ্ডী তিনখানি গ্রন্থের রচয়িতা । তাঁর প্রসিদ্ধ গ্রন্থগুলির মধ্যে ‘ দশকুমারচরিতম্ ’ নামক গদ্যসাহিত্য এবং ‘ কাব্যাদর্শ ’ নামক অলংকারশাস্ত্র সুবিদিত । বহু মতানৈক্য থাকলেও শেষ পর্যন্ত ‘অবন্তিসুন্দরীকথা ’ নামক আখ্যায়িকাটিকে দণ্ডীর রচনা বলেই স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে । 
        
        
[        ]  দণ্ডীর গদ্যকাব্যগুলির মধ্যে দশকুমারচরিতম ’- ই সর্বাধিক সমাদৃত । দশজন কুমারের জীবনচরিত অবলম্বন করে গ্রন্থখানি রচিত । এই গ্রন্থের কেন্দ্রীয় চরিত্র হল রাজকুমার রাজবাহন । মগধরাজ রাজহংস মালবরাজ মানসারের কাছে পরাজিত হয়ে সস্ত্রীক বিন্ধ্যগিরিতে বাস করতে থাকেন । সেইখানেই রাজবাহনের জন্ম । রাজার মন্ত্রীদের এবং বন্ধুর আরও ৯ জন কুমার রাজার নিকট প্রেরিত হয় এবং এই দশজন কুমারের লালনপালন ও শিক্ষাদীক্ষার দায়িত্ব রাজার ওপর বর্তায় । পরে যৌবনপ্রাপ্ত কুমারগণ দিগবিজয়ে যাত্রা করে পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন । দীর্ঘকাল পরে তাঁদের পুনর্মিলন ঘটে এবং প্রত্যেকে নিজ নিজ জীবনের ঘটনা ও অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করেন । এই কাহিনি নিয়েই ‘দশকুমারচরিতম্ । ‘

[       ]  দশকুমারচরিতম্ নাম অনুসারে দশজন কুমারের বৃত্তান্ত আশা করা যায় । তন্মধ্যে আটটি উচ্ছ্বাসে আট জন কুমারের কাহিনি লিপিবদ্ধ আছে । পরে এই অসম্পূর্ণতা দূর করার জন্য পূর্বপীঠিকা এবং উত্তরপীঠিকা নামে দুটি অংশ মূলগ্রন্থের সঙ্গে যুক্ত করা হয় । বর্তমানে কাব্যটি যেভাবে পাওয়া যায়, তা মূলত তিনভাগে বিভক্ত— (১ ) পূর্বপীঠিকা , (২ ) উত্তরপীঠিকা এবং ( ৩ ) উপসংহার । 


কবির অপর একটি গদ্যকাব্য হল ‘ অবন্তিসুন্দরীকথা ' । সম্ভবতঃ অবন্তিসুন্দরীর কাহিনি ছিল দশকুমারচরিতে বর্ণিত মূল কাহিনির প্রারম্ভিক অংশ এবং পরবর্তীকালে উক্ত রচনাটি লুপ্ত হলে তার সারাংশ দশকুমারের পূর্বপীঠিকারূপে যুক্ত হয় । 

তাই পণ্ডিতদের অনুমান অবন্তিসুন্দরীর মূল কাহিনি বৃহৎকথার কোনাে গল্প থেকে সংগৃহীত । অবন্তিসুন্দরীতে সমুদ্রদত্ত ও কাদম্বরী এবং শৌনক ও বন্ধুমতীর আখ্যান বিবৃত । গদ্য রচয়িতা হিসেবে দণ্ডীর রচনায় সামঞ্জস্যবােধ আছে । শ্লেষ , অর্থহীন শব্দভাণ্ডার বা সুদীর্ঘ সমাসের দ্বারা অযথা তাঁর রচনা কোথাও ভারাক্রান্ত হয়নি । ছন্দের প্রত্যক্ষ যােগ না থাকলেও কাব্যে ছন্দগত দোলা , ধ্বনি, মাধুর্য এবং শব্দ ঝংকারের বৈচিত্র্য সুস্পষ্ট । তাঁর রচনা পড়ে “গদ্যং কবীনাং নিকষং বদন্তি ” —এই বােধ জাগে । তাঁর বক্তব্য স্পষ্ট,ভাষা সরল , ললিত এবং সাবলীল । আর কাহিনিও চিত্তাকর্ষক । এই জন্যই বলা হয়— “ দণ্ডিনঃ পদলালিত্যম । ” 


 চরিত্রচিত্রণে কবি সিদ্ধহস্ত । মুখ্য চরিত্রগুলি তাে বটেই , এমনকি কামমঞ্জরী , বসুপালিত , মরীচি প্রভৃতি গৌণচরিত্রগুলিও তাঁর রচনায় জীবন্ত হয়ে উঠেছে । তৎকালীন সমাজের নৈতিক অবনতি , যথা লােভ , অসাধুতা , প্রতারণা, গুপ্তপ্রেম, নারীহরণ , চুরি , জুয়াচুরি প্রভৃতি কুৎসিত দিকগুলিও ব্যক্ত করতে কবি কুণ্ঠিত হননি । কাল্পনিক আদর্শ সমাজচিত্র রচনা করা তাঁর উদ্দেশ্য ছিল না । বাস্তব জীবনের প্রতি তাঁর দৃষ্টি অধিক নিবদ্ধ ছিল । দণ্ডীর কবিপ্রতিভা ছিল অনন্যসাধারণ । প্রাকৃতিক বর্ণনায়, মানবিক রূপ ও গুণ বর্ণনায় , ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ - পরিহাসে , বাচাতুর্যে এবং হাস্যরস সৃষ্টিতে তাঁর নৈপুণ্য অসাধারণ । তিনি ছিলেন একজন কুশলী কথাশিল্পী ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন